৫ দিন লড়াই চালিয়ে শেষে সোমবার সকালে থেমে গেল লড়াকু নেতার লড়াই
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৩:২৪ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার
সৈয়দ মফিজুল হোদা,বাঁকুড়াঃ মধ্যরাতে না ঘুমানো চোরকলা গ্রামে ফিরল মঈদুলের কফিন বন্দি দেহ, শোকে উত্তাল গোটা গ্রাম
সোমবার রাতভোর জেগে ছিল বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার চোরকলা গ্রাম। খবর এসেছিল ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে। নিতান্তই সাদামাটা ছাপোষা ঘরের ছেলে মঈদুল ইসলাম মিদ্যা। ফুল মালায় সেজে ঘরে ফিরছে। তবে ফিরছে নিথর দেহে কফিন বন্দি হয়ে। দাবি ছিল সবার জন্য শিক্ষার ও চাকরি । অভাবের সংসারে না খেতে পাওয়া ছেলেটি B.A পাশ করে অভাবি সংসারে দু মুঠো খাবার তুলে দেবার জন্য হন্যে হয়ে ছুটে বেরিয়েছিল মঈদুল। কিন্তু কোথাও জোটেনি একটা পেট চালানোর চাকরি।
অবশেষে সংসার বাঁচাতে বেছেনেয় ঋণ করে একটি টোটো। এটাই ছিল তার সংসার চালানোর উৎস।
খুব কী অন্যায় দাবি ছিল? যার জন্য পুলিশের লাঠিপেটা খেতে হল? সোমবার সকালে গ্রামে খবরটা আসতেই এই প্রশ্নগুলি ঘুরে বেড়াচ্ছিল গ্রামে। ওই দাবি নিয়ে নবান্নে যাওয়ার পথে পুলিশের লাঠির আঘাতে মহানগরের রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছেল নিতান্ত গরিব ঘরের এক অটো চালক ছেলে।
বেসরকারি নার্সিংহোমে ৫ দিন লড়াই চালিয়ে শেষে সোমবার সকালে থেমে গেল লড়াকু নেতার লড়াই। কী হবে এখন? ৩ মেয়ে নিয়ে গোটা পরিবারটাই এবার বুঝি ভেসে যাবে। পরিবার থেকে গ্রামবাসী সবার চোখেই বাধভাঙ্গা জল।মঙ্গলবার দুপুরে দলের নেতা কর্মীদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতি মেনে গ্রামের মাটিতেই মঈদুল ইসলাম মিদ্যার দেহ কবর হয়।
মঈদুলকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখার্জী। তিনি মুখ্যমন্ত্রী ঐ পরিবারের ১ সদস্যকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসের কথায় বলেন 'হাজার হাজার যুবকরা নবান্নে গিয়েছিল চাকরির দাবি নিয়ে। এখন মঈদুলের মৃত্যুর বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার নামে মুখ্যমন্ত্রী কী ইঙ্গিত দিতে চাইছেন? উনি পুলিশ মন্ত্রী। ওনার পুলিশ মঈদুলকে পিটিয়ে মেরে ফেলল আর উনি বলছেন আমি ওই পরিবারের পাশে আছি! এর থেকে বড় প্রহসন আর কিছু হয়না'।
বেকারদের চাকরি এবং সবার জন্য শিক্ষার দাবি আদায়ের জন্য এক লড়াকু নেতার জীবন থেমে গেল মাত্র ৩১ বছর বয়সে। তাঁর দারিদ্র জীবনের রুজি রুটি ৩ চাকার অটোর চাকা আর হয়তো ঘুরবে না। কিন্তু জীবন ঘুরবে অনিশ্চয়তার চাকায়।