নিউ ইয়র্কে বোমা হামলায় দোষী সাব্যস্ত বাংলাদেশি আকায়েদ
জাগরণ ডেস্ক
দৈনিক জাগরণ
প্রকাশিত : ১১:৫৯ এএম, ৭ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার
গত ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে বোমা হামলাকারী বাংলাদেশি অভিবাসী ‘আকায়েদ উল্লাহকে’ দোষী সাব্যস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালত। আকায়েদের মামলার শুনানি শেষ হয় গত সোমবার। মঙ্গলবার(৬ নভেম্বর) আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। নিয়ম অনুযায়ী আকায়েদের শাস্তি ঘোষণা করা হবে আরো কয়েকদিন পরে। ওই হামলার কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে তার।
২৮ বছর বয়সী আকায়েদ ব্রুকলিনে ট্যাক্সি ক্যাব চালাতো। গত বছর১১ ডিসেম্বর সকালে নিউ ইয়র্কের টাইম স্কয়ারের কাছে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালের পাতালপথে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন আকায়েদ।
শুনানির শেষ দিন আকয়েদ সন্ত্রাসী নয় বলে আদালতে দাবি করেন তার আইনজীবী। আকায়েদের আইনজীবী অ্যামি গ্যালিকিও বলেন,‘সে শুধুই তার নিজের জীবন ধ্বংস করতে চেয়েছিল।সেটি আত্মঘাতী বোমা হামলা নয়। সন্ত্রাসী আক্রমণও নয়।’
এ মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জর্জ টার্নার আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন,‘আকায়েদ তার কাজের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আতঙ্কিত করতে চেয়েছিল ।আকায়েদ অনলাইনে ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর অনুসারী ছিলো এবং সে আইএস এর একজন ‘লোন উলফ’ বা বিচ্ছিন্ন যোদ্ধা হিসেবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’
আকায়েদের আইনজীবী এই বক্তব্যের বিরোধীতা করে বলেন, ‘আকায়েদ কখনোই আইএস সদস্য ছিলো না।আকায়েদ একজন হতাশাগ্রস্ত ও দুর্বল মানুষ ছিলেন।’
আকায়েদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন আইএস সমর্থন,ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার, জনসমাগমস্থলে বোমা বিস্ফোরণ, বিস্ফোরণ বা অগ্নিসংযোগের কারণে জনসম্পত্তি ধ্বংস, গণ পরিবহন ব্যবস্থায় সন্ত্রাসী হামলা ও সহিংস অপরাধ সংঘটনে বিধ্বংসী ডিভাইস ব্যবহারের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়।সবগুলো অভিযোগেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন বিচারক।
কোর্ট হাউস নিউজ সার্ভিসের খবরে বলা হয়েছে, দোষী সাব্যস্ত করার সময়ে আকায়েদ বিচারকের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন,‘সে আইএস সদস্য না।’ বিচারক তাকে বলেন,দণ্ড ঘোষণার দিনে সে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনেই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলো আকায়েদ।
দেশটির সরকারি অ্যাটর্নি জিওফ্রে এস বারম্যান এই ইস্যুতে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন,আদালতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার ঘটনা আমেরিকার গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের মূল নীতিকে সমুন্নত করেছে।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই আকায়েদের
আকায়েদ উল্লার গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে,তবে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার হাজারিবাগে। আকায়েদের বাবা সানাউল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
আকায়েদ ঢাকার জিগাতলার কাকলি স্কুল থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি ও পরে মুন্সী আবদুর রউফ রাইফেলস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে। এর পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হন। বিবিএ পড়ার মাঝখানে ২০১১ সালে গ্রিন কার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা চাচার স্পন্সরশিপে অভিবাসন শৃঙ্খল নীতির আওতায় ভিসা নিয়ে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র চলে যায় আকায়েদ।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন,‘বাংলাদেশে থাকার সময় তার কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ আমরা পাইনি’। আর দশটা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মতোই ছিলো সে।
বাংলাদেশে তার স্ত্রী ও একটি শিশু সন্তান রয়েছে।আকায়েদের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জুই গত বছর বলেছিলেন,“আমার স্বামী সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছিলো।দেশে আসার পর অধিকাংশ সময়ই বাচ্চার সঙ্গে বাসায় থেকেছে।সে নামাজ পড়ত ঠিক,কিন্তু আমার কখনো মনে হয়নি এরকম (জঙ্গিবাদী)কিছু করতে পারে।আমি চাই বিষটি তদন্ত করা হোক।সে যদি দোষী হয় তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক।’ সূত্র: এপি
সাইসে