ছন্দে-কথায় জীবনের রঙ-বেরঙ শীর্ষক আন্তর্জাতিক-আন্তর্জালিক সেমিনার
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৭:৫৯ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার
ছন্দে-কথায় জীবনের রঙ-বেরঙ শীর্ষক আন্তর্জাতিক-আন্তর্জালিক সেমিনার দাগ কাটে
সংবাদদাতা; সাহিত্যের চার বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে গবেষক-শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রীরা সমৃদ্ধ হলেন। প্রয়াস সার্থক। সুগভীর আলোচনা সকল অংশ গ্রহণকারীর মনে বিশেষ দাগ কাটে। আসানসোল গার্লস কলেজের বাংলা বিভাগ ও 'আইকিউএসি'র উদ্যোগে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আন্তর্জাতিক-আন্তর্জালিক অনলাইনে এক ব্যতিক্রমী আলোচনাসভা। 'ছন্দে-কথায় জীবনের রঙ-বেরঙ' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিলেন ভারত ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকেরা। প্রথম দিনে "সাম্প্রতিক কথাসাহিত্যের গতিপ্রকৃতি" নিয়ে দুর্দান্ত আলোচনা করলেন, ভারতের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত। আর "উনবিংশ শতকের বাংলা শিশু সাহিত্য" নিয়ে চমৎকার বললেন, শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক খন্দকার মাহমুদুল হাসান (বাংলাদেশ)।
কথাসাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত বক্তব্য রাখার সময়ে তুলে ধরেন, সাম্প্রতিক কালেও সাহিত্য পাঠ এবং সাহিত্য চর্চা যথেষ্ট গুণমানের হচ্ছে। পাঠককে ভালো লেখা খুঁজে নিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার সাহিত্য চর্চা যেমন জানতে হবে, বইও পড়তে হবে।
খন্দকার মাহমুদুল হাসানের বক্তব্য, মৌখিক সাহিত্যের ঐতিহ্য থাকলেও বাংলা ভাষায় লিখিত আধুনিক শিশুসাহিত্যের উন্মেষকাল ঊনবিংশ শতক। এই সাহিত্যের প্রধান বাহন দুটি; বই ও পত্রিকা-সাময়িকী। তিনটি ধাপে এই একশো বছরে বাংলা শিশুসাহিত্যের অগ্রযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমে (১৮১৮-১৮৪৬) পুরোটা অনুবাদ ও পাঠ্যপুস্তক নির্ভর থাকলেও বিদ্যাসাগরের আবির্ভাবের পর থেকে (১৮৪৭-১৮৯১) সৃষ্টিশীলতার উন্মেষ ঘটতে থাকে। ১৮৮৩ সালে প্রমদাচরণ সেন সম্পাদিত 'সখা'র মাধ্যমে ছোটোদের পত্রিকা নবউত্থানপর্বে উন্নীত হয়। ১৮৯১-এ যোগীন্দ্রনাথ সরকারের 'হাসি ও খেলা' প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বাংলা শিশুসাহিত্য পুরোপুরি আধুনিকতার ধারায় নবউত্থান পর্বে প্রবেশ করে। গল্প-উপন্যাস-ছড়া-কবিতা সহ সৃজনশীলতার চর্চা ব্যাপকতর হয়। স্বাধীন চিন্তাশক্তির প্রয়োগই বাংলা শিশুসাহিত্যকে এই অবস্থায় উন্নীত করেছে।
দ্বিতীয় দিনে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ড. রামকুমার মুখোপাধ্যায় মূল্যবান আলোচনা করে সকল গবেষককে চমকে দিলেন। "ভারতীয় লোককথা : জীবনের নানা রঙ" বিষয়ে তিনি মূল্যবান আলোকপাত করেন। ড. রামকুমার মুখোপাধ্যায়-এর কথায়, ভারতীয় লোককথা জীবনবোধে, মানুষের কল্পনার বিচিত্র গতিতে, বাঁচার নানা রং ও রঙ্গে এক অসামান্য সৃষ্টি। সংসার, সমাজ, কৃষিক্ষেত্র, সাধুর আশ্রম, চোরের বাড়ি থেকে স্বর্গ পর্যন্ত তার অবাধ গতি। ভারতবর্ষের তেমনই বাহান্নটি ভাষার লোকগল্প নিয়ে এই আলোচনা।
বাংলাদেশ থেকে বিশিষ্ট কবি, চিত্রকর, অধ্যাপক ড. পাবলো শাহি আলোচনা করলেন "বাংলা কবিতা : চর্যাপদ থেকে সমকাল" বিষয় নিয়ে। ড. পাবলো শাহি বলেন, বাঙালির জাতিসত্তা গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছিল মহাপ্রভু চৈতন্য, লালন ফকির। আর ভাষা নির্মাণে যিনি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন তিনি গৌড়েশ্বর আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। বাঙালির জীবন সমাজকে কবিতায় নির্মাণ করেছেন জসীমউদ্দীন। বাঙালির জাতিসত্তাকে কবিতায় ধারণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। আর সব কিছু উৎস হয়ে আছে বাঙালির গ্রান্ড মা কালি।
গবেষক ও আলোচক অতিথিদের মধ্যে প্রশ্ন উত্তর পর্বটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এক একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আলোচক অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তারা।
একাডেমিক আলোচনায় আধুনিক সাহিত্যের নানান দিক নিয়ে আলোচনা বেশ জমে উঠে এবং ডিজিটাল মাধ্যমে অতিথিদের বরন পর্ব ছিল চিত্তাকর্ষক।
সবশেষে এই ওয়েবিনারের কার্যনির্বাহক সমিতির আহ্বায়ক ও আসানসোল গার্লস কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান নাফিসা পারভিন খান যে সমাপনী বক্তব্য রাখেন তা'ও ছিল অত্যন্ত মর্যাদার অন্বেষণ।
তিনি দু'দিনের আলোচনার মুখ্য আলোচক কথাসাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত (ভারত), শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক খন্দকার মাহমুদুল হাসান (বাংলাদেশ), প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ড. রামকুমার মুখোপাধ্যায় (ভারত) ও কবি,প্রাবন্ধিক ড. পাবলো শাহি (বাংলাদেশ)-কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
সেমিনারের আয়োজন সাফল্যের জন্যে কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মুখ্য পৃষ্ঠপোষক ড. সন্দীপ কুমার ঘটক, আই.কিউ.এ.সি. সমন্বয়ক ও সহযোগী পৃষ্ঠপোষক ড. শ্যামল শেঠ, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যা ড. শাশ্বতী মজুমদার (বাংলা বিভাগ), ড. আভা মল্লিক (বাংলা বিভাগ), রোহিণী কর (ইতিহাস বিভাগ), ড. মধুমিতা জমিদার (দর্শন বিভাগ), কার্যকরী সদস্য ড. মাল্যবান চট্টোপাধ্যায় (ইতিহাস বিভাগ), আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাংলা বিভাগ),দেব আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (বাংলা বিভাগ), ভূতনাথ চ্যাটার্জী (বাংলা বিভাগ)-কে ধন্যবাদ জানান। যাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছাড়া এই আলোচনা কিছুতেই সবার কাছে পৌঁছোতে পারত না সেই প্রাযুক্তিক সহায়তা দানকারী ড. সুরজিৎ জানা (রসায়ন বিভাগ), ড. প্রদীপ ঘাঁটী (কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ) ও শুভাশীষ ঘোষ (কম্পিউটার অ্যাপলিকেশন বিভাগ)-কেও বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। যে ছাত্রীরা আন্তরিক চেষ্টা ও শ্রমের মাধ্যমে পুরো ব্যাপারটাকে সফল করে তুলেছে তাদের নামোল্লেখও তিনি করেন। সবশেষে আবারও সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি এই দ্বি-দিবসীয় আন্তর্জাতিক-আন্তর্জালিক আলোচনাসভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সমাজকে আলোকিত করতে করোনা কালে ব্যতিক্রম সাহিত্য বিষয় নিয়ে মূল্যবান সেমিনার আয়োজন করে আসানসোল গার্লস কলেজের বাংলা বিভাগ বিশেষ বার্তা দিল। মানুষের মনে জায়গা করে নিল এই সফল আয়োজন।