বিলুপ্ত হলো ডাক বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের ১৩৯টি পদ
আবুল সাহিদ , শিলচর আসাম
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১১:০৯ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার
একটা দুটো নয়, ডাক বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের পুরো ১৩৯টি পোস্ট বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। এবার কোথায় দাঁড়াল প্রধানমন্ত্রীর 'ভোকাল ফর লোকাল'!একদিকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের চাকরির ক্ষেত্রে একের পর এক বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বরাক উপত্যকার যুবকরা। এই সময়ে কেন্দ্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের এধরনের সিদ্ধান্ত আরও একবার এলাকার যুবপ্রজন্মকে প্রতারণা করল, বলা চলে।
একটা দুটো নয়, ডাক বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের পুরো ১৩৯টি পোস্ট বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। একদিকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের চাকরির ক্ষেত্রে একের পর এক বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বরাক উপত্যকার যুবকরা। এই সময়ে কেন্দ্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের এধরনের সিদ্ধান্ত আরও একবার এলাকার যুবপ্রজন্মকে প্রতারণা করল, বলা চলে।
ভারতীয় ডাক বিভাগ বিশ্বের অন্যতম বড় ডাক বিভাগ। ডাক পরিষেবা এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের পক্ষ থেকে অরুণ সরকার
জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে পদগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে এব্যাপারে কোন বিস্তারিত তথ্য দিতে তিনি রাজি হননি। আমরা এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য খুঁজে বের করতে গিয়ে কিছু চিঠিপত্রের খোঁজ পেয়েছি। এবছর জুন মাসের ২৬ তারিখ অরুণ সরকার একটি চিঠি পাঠিয়ে পিএ ক্যাডারের ২৬টি পোস্ট বাতিলের নির্দেশ দেন। জুলাই মাসের ২৪ তারিখ আরও একটি চিঠিতে পিএ ক্যাডারের ১৬টি, পোস্টম্যান ক্যাডারের ৩৮টি এবং ১টি মাল্টিটাস্কিং কর্মীর পোস্ট বাতিলের নির্দেশ জারি করেন। তাকে এই চিঠিগুলো দেখিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গুয়াহাটির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে আসাম সার্কেলের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কে শিবা শংকর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাকেই এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা উচিত।
যদিও এরপর তিনি আর আমাদের ফোনকলের বা মেসেজের উত্তর দেননি। প্রশ্ন উঠছে, যদি তারা কোন সঙ্গত কারণে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে কেন এই লুকোচুরি?
অরুণ সরকারের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে ২০০২, ২০০৪, ২০০৬, ২০০৯, ২০১২, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের ডিরেক্টিভ ফলো করা হয়েছে। তবে যারা এখানে কাজ করেছেন তারা বলছেন, “আমরা এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কাজ করেছি এবং পদগুলোর বিলুপ্তি থেকে বাঁচানো হয়েছে। কিছু কিছু পোস্ট দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে, বিভাগ চাইলেই সেগুলোতে কন্ট্রাকচুয়াল পদ্ধতিতে নিযুক্তি দিতে পারত। এতে অনেক পরিবারের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ছিল।অরুণ সরকারের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে ২০০২, ২০০৪, ২০০৬, ২০০৯, ২০১২, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের ডিরেক্টিভ ফলো করা হয়েছে। তবে যারা এখানে কাজ করেছেন তারা বলছেন, “আমরা এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কাজ করেছি এবং পদগুলোর বিলুপ্তি থেকে বাঁচানো হয়েছে। কিছু কিছু পোস্ট দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে, বিভাগ চাইলেই সেগুলোতে কন্ট্রাকচুয়াল পদ্ধতিতে নিযুক্তি দিতে পারত। এতে অনেক পরিবারের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ছিল।
বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের এক প্রাক্তন সুপারের মতে, এসব সিদ্ধান্ত অনেকজন অথরিটি নেন না, বরং স্থানীয়দের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয় এবং এর পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, “অতীতে আমাদের কাছে এধরনের প্রস্তাব এসেছে। হাইয়ার অথরিটি যদি মনে করতেন এখানে পোস্টগুলোর প্রয়োজন নেই তাহলে তারা পুরো ডাকঘরটাই উঠিয়ে নিতেন। যখন বলা হবে এই পোস্টগুলোর প্রয়োজনীয়তা কি, সেক্ষেত্রে স্থানীয় আধিকারিকদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজের পক্ষ তুলে ধরা। তারা যদি বলেন পোস্টগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তবে কেন্দ্রীয় তরফে সেগুলো বিলুপ্তির কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।’
ডাক বিভাগের কর্মচারি ইউনিয়ন এব্যাপারে অরুণ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছিল। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অরুণ সরকার আগে কথা দিয়েছিলেন পোস্টগুলো বিলুপ্ত করা হবে না। অথচ তিনি চুপিচুপি নির্দেশ জারি করেছেন। এতে কর্মচারিরা অপমানিত বোধ করছেন এবং মনে করছেন তাদের ঠকানো হয়েছে। তারা বলেন, “আমাদের ঠকানো হয়েছে, কথা দিয়েও কথা রাখা হয়নি। এর পরিণাম ভালো হবে না, এব্যাপারে চরম বিরোধিতা করা হবে।”ডাক বিভাগের কর্মচারি ইউনিয়ন এব্যাপারে অরুণ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছিল। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অরুণ সরকার আগে কথা দিয়েছিলেন পোস্টগুলো বিলুপ্ত করা হবে না। অথচ তিনি চুপিচুপি নির্দেশ জারি করেছেন। এতে কর্মচারিরা অপমানিত বোধ করছেন এবং মনে করছেন তাদের ঠকানো হয়েছে। তারা বলেন, “আমাদের ঠকানো হয়েছে, কথা দিয়েও কথা রাখা হয়নি। এর পরিণাম ভালো হবে না, এব্যাপারে চরম বিরোধিতা করা হবে।”
আইসিই সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতবর্ষের চল্লিশ শতাংশ পরিবার একজনের রোজগারের ওপর নির্ভর করে চলে। ডাক বিভাগ একই সঙ্গে ১৩৯টি পোস্ট বিলুপ্ত করেছে অর্থাৎ প্রায় ৭০০ মানুষের অন্নসংস্থান কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
কাছাড় কাগজ কল বন্ধ হওয়ার পর এভাবেই অনেক পরিবার বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন এবং এই ধারা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি দূরদর্শন কেন্দ্রের স্থানীয় সম্প্রচার নিয়ে নানান কথা উঠেছে। এবার ডাক বিভাগে থাবা পড়ল।
করোনা ভাইরাসকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন সারাদেশে কড়া লকডাউন চালু করলেন, বরাক উপত্যকার অনেক যুবক-যুবতী যারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতেন তারা কাজ হারিয়েছেন। এরপর যখন তাদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হল, কাছাড় জেলায় প্রায় তিরিশ হাজার মানুষ ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশ কাজের সুযোগ হারিয়ে শুধুমাত্র প্রাণ রক্ষার্থে বাড়ি ফিরেছেন। এই অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। অভিযোগে প্রকাশ, এদের কর্মসংস্থানের কোনও পদক্ষেপ সরকার করেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এব্যাপারে কোনও প্রশ্ন তোলেননি। লকডাউন চলাকালীন রাজ্যে হাজারখানেক সরকারি চাকরি হয়েছে এবং এতে বরাক উপত্যকার একজন যুবক-যুবতীও সুযোগ পায়নি। অনেকেই এনিয়ে প্রশ্ন তুললেও সরকারের তাতে কিছু এসে যায় না। এবার কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকেও যুব সমাজের কোমর ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একসঙ্গে কাছাড় জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের ১৩৯টি পোস্ট বাতিল করার মানে হচ্ছে, ১৩৯টি পরিবারকে কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী ‘ভোকাল ফর লোকাল’ ক্যাম্পেইন করলেও তারই মন্ত্রক মানুষের কাছ থেকে কাজের সুযোগ ছিনিয়ে নিচ্ছে। অবশ্যই অতীতের মতো এব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চুপ থাকবেন, অথবা হয়তো বলবেন বরাক উপত্যকায় যুবক-যুবতীদের যোগ্যতাই নেই।