ব্যাটিং ব্যর্থতাই ডোবালো বাংলাদেশকে
স্পোর্টস ডেস্ক
দৈনিক জাগরণ
প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
৫ বছর পর জিম্বাবুয়ের প্রথম কোনো টেস্ট ম্যাচ জয়। বিদেশের মাটিতে যা দীর্ঘ ১৭ বছর পর। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে বেশ ভালোভাবেই ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করলো হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দল। জয়টাও বড় ব্যবধানের। স্বাগতিকদের তারা হারিয়েছে ১৫১ রানে।
আজ সকালের সেশনে বাংলাদেশ যখন ব্যাটিংয়ে নামে, তখন জয়ের জন্য দরকার ছিল আরও ২৯৫ রান। হাতে ছিল সবকটি উইকেটই। তবে নতুন করে আর কোনো ইতিহাস গড়া হল না টাইগারদের। উল্টো প্রথম ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল স্বাগতিকেরা।
ম্যাচ শেষে আজ সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কণ্ঠেও ঝরলো একরাশ হতাশা। সাথে সরল স্বীকারোক্তি এখনও টেস্ট ম্যাচ খেলতে যে শৃঙ্খলা দরকার তা গড়ে ওঠেনি ক্রিকেটারদের মাঝে। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যে আত্মবিশ্বাস দরকার তাও যে দলে পুরোপুরি নেই তাও স্বীকার করে নিলেন অকপটে।
টেস্ট জিততে বাংলাদেশের শেষ দুদিনে দরকার ছিল আরও ২৯৫ রান। ম্যাচ জিততে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা ছিল কি দলের? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘পরিকল্পনা তো অবশ্যই ছিল। আর উইকেটও ভালোই ছিল। ম্যাচ জেতার যে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা ব্যাটিংয়ে নেমেছিলাম তা পালন করতে আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ। আর তাই এরকম বাজে হার।’
গতকাল বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস বলেছিল বাংলাদেশ উইকেট বুঝতে কিছুটা ভুল করেছে। তার উপর এখন দলের এরকম বাজে পারফর্মেন্স। একটা ভুলের সূত্র ধরেই কি আরও ভুলগুলো বেরিয়ে আসছে কি-না? তবে মাহমুদুল্লাহ কিন্তু কোনো ভুল মানতেই নারাজ। তার মতে বোলাররা সবাই ভালো করেছে। গলদ যা ওই এক ব্যাটিং পারফর্মেন্সেই। আর তাই ডুবিয়েছে গোটা দলকে।
বিগত শেষ ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসেই বাংলাদেশ অলআউট ২০০ রানের নিচে। টেস্ট ক্রিকেটে এলেই দলের এমন বেহাল দশা কেন? তার উপর আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া। এরকম বাজে পারফর্ম করতে থাকলে হয়তো সামনে থেকে টেস্ট ম্যাচ আরও কম পেতে পারে বাংলাদেশ! এমতাবস্থায় বাংলাদেশের উপর কোনো রকমের চাপ কাজ করছে কি? এ প্রশ্নের জবাবে ওডিআই সিরিজকে টেনে অধিনায়কের ওই আগের কথাই। তার মতে, একদিনের ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা দারুণ ছন্দেই আছে। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যে আলাদা নিয়ম-শৃঙ্খলা ও মেজাজের দরকার তাই মেনে চলতে পারছেনা দলের ব্যাটসম্যানরা। শট খেলায়ও যে আরও বেশি মনোযোগী ও ত্রুটিহীন হতে হবে তাও পরামর্শ হিসেবে নিলেন। তবে সামনের বছরগুলোতে কত টেস্ট পাচ্ছেন কি- না পাচ্ছেন তা নিয়ে আপাতত দলের কোনো মাথা ব্যথা নেই বলে জানান তিনি। দল কিভাবে স্বরূপে ফিরে আসতে পারে তা নিয়েই যত ভাবনা-চিন্তা এখন।
এর ফাঁকে প্রশ্ন এলো তার নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়েও। শেষ ৮ ইনিংসে একবারও তিনি পেরোতে পারেননি ২০ অংকের কোটা। অধিনায়কত্ব কি ব্যাটিং থেকে মনোযোগ আরও সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? তবে ফর্মে না থাকাটাকে, অধিনায়কত্বের চাপের ঢাল বানালেন না মাহমুদুল্লাহ। তার কাছে দলের অধিনায়কত্ব আর নিজের ব্যাটিং সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আর কথাও দিলেন সমস্যাগুলো কাটিয়ে বেশ দ্রুতই জ্বলে উঠবেন তিনি।
তবে সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে ওই একটা প্রশ্নই আসছিলো। এক পেসার নিয়ে এই টেস্টে নামাটা কতখানি যুক্তিযুক্ত ছিল? নাকি উইকেট বুঝতে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই মানসিকভাবে দল আগেই হেরে বসেছে? মাহমুদুল্লাহর উত্তর বেশ সোজাসাপটা। তার ও টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘উইকেট পুরো শুষ্ক ছিল। আর এই উইকেটে তিনজন স্পিনার খেলানোর পক্ষেই ছিলাম আমি আর পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট। আমি বলতে পারি আমাদের এ দলই জিম্বাবুয়েকে হারানোর সামর্থ্য রাখে। তবে দুর্ভাগ্য! আর জিম্বাবুয়ে অবশ্যই খুব ভালো পারফর্ম করেছে পুরো টেস্টে। ’
তবে আশার কথাও শোনালেন সাকিবের অনুপস্থিতিতে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব বহন করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কথা দিলেন তার দল সকল ভুল-ত্রুটি শুধরে ঢাকা টেস্টেই বেশ ভালোভাবে ফিরে আসবে। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ ততবারই ভালোভাবে ফিরে এসেছে যখন তাদের খারাপ সময় চলছিলো। ইনশাআল্লাহ! সামনের টেস্টে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখবেন আশা করি।’ সাথে এও ইঙ্গিত দিলেন যে, ঢাকা টেস্টে দলের প্রয়োজনে হয়তো ব্যাটিং অর্ডারও পরিবর্তন আনা হতে পারে। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘মুশফিকের সাথে কথা বলা হবে। টিম ম্যানেজমেন্টের সাথেও কথা বলা হবে। মুশফিক ব্যক্তিগতভাবে কী চায় তাও বিবেচনা হবে।' হয়তো দলের প্রয়োজনে পরের টেস্ট থেকে তাকে আবার উপরেই ব্যাট করতে দেখা যেতে পারে!
এসএইচএস/এফসি