সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পবিত্র আশুরা (মহরম) বেশ সাড়ম্বরে পালন করলো বদরপুর যুব ঐক্য মঞ্চ

দিদারুল ইসলাম, করিমগঞ্জ আসাম

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০২:২৩ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২০ সোমবার

পবিত্র আশুরা (মহরম) বেশ সাড়ম্বরে পালন করলো বদরপুর যুব ঐক্য মঞ্চ। লকডাউনের সম্পূর্ণ  নিয়মনীতি মেনে এদিন সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মঞ্চ। এতে গজল, ক্বিরাত ও মোহররমের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। "শহিদে কারবালা আনন্দের নয় বিষাদের" শীর্ষক এদিনের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ তথা দেওরাইল টাইটেল মাদ্রাসার মোহাদ্দিস মুফতি আব্দুল বাসিত কাসেমী, বরাক উপত্যকার বিশিষ্ট ইসলামিক ধর্মীয় পন্ডিত মওলানা আবুল হুসেন কাসেমী ও মৌলানা মাহবুব আহমেদ। মুফতি বাসিত কাসেমী তাঁর বক্তব্যে বলেন মোহররম খুশি বা দুঃখের শিক্ষা দেয় নি বরং মোহররম আমাদেরকে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত না করার জন্য   শিক্ষা দিয়েছে। কাসেমী বলেন মোহররমের নামে নিজের শরীর থেকে রক্ত না ঝরিয়ে সেই  রক্ত দান করে অন্যের জীবন রক্ষা করতে এগিয়ে আসা উচিৎ। তিনি বলেন হাসান হোসেনের মৃত্যুদিবস পালনের মাধ্যমে তাদেরকে স্মরন না করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দেওয়াকে স্মরণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।  মৌলানা আবুল হুসেইন কাসেমী তাঁর বক্তব্যে বলেন মোহররম শুধুমাত্র কারবালার ইতিহাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ঐতিহাসিক এদিনে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যহলো 
এই দিনে প্রথম মানব আদি পিতা আদম-কে সৃষ্টি করেন আল্লাহ।আদম-কে এদিনেই স্বর্গ বা জান্নাতে স্থান দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে এই দিনেই পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহ তাকে প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন।
নূহ-এর সময়কালে এই দিনে মহাপ্লাবন হয়।
ইব্রাহীম জন্ম নেন এই দিনে এবং মূসা ও তার সাথীরা ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার পানও এই দিনে।
মূসার সমসাময়িক ফেরাউন ও তার সৈন্যদেরকে আল্লাহ এই দিনে নীল নদের পানিতে ডুবিয়ে মারেন।
ইউনুছ মাছের পেট থেকে মুক্তি পান এই দিনে।
আইয়ূব রোগ মুক্তি পান এই দিনে।
ঈসা (খ্রিস্টধর্মমতে যিশু) এই দিনে জন্ম নেন এবং পরবর্তিতে তাকে সশরীরে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় এই দিনে।নবী মুহাম্মদ-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন এই দিন কারবালার ময়দানে ইয়েজিদের সৈন্যদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। তাই এই দিনকে তাজিয়া বা মিছিলের মাধ্যমে স্মরণ না করে ভালো কাজের মাধ্যমে স্মরণ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। মওলানা মাহবুব আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন  ইতিহাসকে ঘিরেই আশুরা আমরা যেভাবে স্মরণ করা উচিত ছিলো বাস্তবতা কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত। বরং আশুরার ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। হজরত হুসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনার অনেক আগ থেকেই আশুরা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যঘেরা দিন। কারণ কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ মহররম। আর আশুরার রোজার প্রচলন চলে আসছে ইসলাম আবির্ভাবেরও বহুকাল আগ থেকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে আবহমানকাল থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যেমন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি হিজরি ৬১ সনে আশুরার দিন কারবালার ময়দানের দুঃখজনক ঘটনাও  জাতির জন্য অতিশয় হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। প্রতিবছর আশুরা আমাদের এই দুঃখজনক ঘটনাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এও বাস্তব যে এ ঘটনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পেরে আজ অনেকেই ভ্রষ্টতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। যারা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে ব্যথাভরা অন্তরে স্মরণ করে থাকেন, তারা কোনো দিনও চিন্তা করেছেন যে কী কারণে হজরত হুসাইন (রা.) কারবালার ময়দানে অকাতরে নিজের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তো অনেকেই মনে করেন যে জারি মর্সিয়া পালনের মধ্যেই কারবালার শহিদদের স্মরন করলেই আশুরা পালন হয়ে যায়। তিনি বলেন  হজরত হুসাইন (রা.)-এর উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তব জীবনে অনুসরণ করাই হবে এ ঘটনার সঠিক মর্ম অনুধাবনের বহিঃপ্রকাশ। হজরত হুসাইন (রা.)-ও রাসুলে করিম (সা.)-এর প্রতি মুহব্বত ও আন্তরিকতার একমাত্র পরিচায়ক। এদিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলাওতের মাধ্যমে।  এতে ইসলামিক সংগীত পরিবেশন করেন হাসানুল বান্না খান। এদিনের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যখ্যা করেন ঐক্য মঞ্চের কর্মকর্তা মনসুর আলম।  সমস্ত অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মেহবুব আহমেদ মজুমদার।  এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সাহাব উদ্দিন, সাইদুল ইসলাম, ফয়সল আহমেদ মন্টি,ওয়েস আহমেদ, নিজামুদ্দিন সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে বিশ্ব শান্তির উদ্দেশ্যে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। সবশেষে শিরনী বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।