বরাকের তিন জেলায় নয় দিনের জন্য লকডাউন,কড়া কোভিড বিধি বলবত্
দিদারুল ইসলাম, করিমগঞ্জ আসাম
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১১:৫৭ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২০ সোমবার
কাছাড় সহ বরাক উপত্যকার তিন জেলায় কোভিড-১৯ জনিত বিধিনিষেধ আরও কঠোর করা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করে জেলাজুড়ে ক্রমবর্ধিত নভেল করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক রোগকে প্রতিরোধ করতে গৃহীত ব্যবস্থা হিসেবে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। করোনা অতিমারির জন্য ২৭ আগস্ট ভোর ৫.০০টা থেকে ৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত তিন জেলায় সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির পাশাপাশি কাছাড়ের জেলাশাসক তথা জেলা দুর্যোগ মোকাবেলা কর্তৃপক্ষের চেয়ারপার্সন কীর্তি জল্লি এক নির্দেশিকা জারি করেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৫-এর ৩০ (২) (ভি)-এর অধীন প্রদত্ত ক্ষমতা বলে এবং রবিবার রাজ্য সরকারের আদেশ অনুসারে এখন পর্যন্ত বেশ কিছুসংখ্যক এসিমপ্টমেটিক কোভিড রোগী সিমপ্টমেটিক পজিটিভে পরিণত হয়েছে। এর ফলে, বিশেষ করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সহজলভ্যতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং, কঠোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অতিমারি সংক্রমণের চেইন ভেঙে দিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অন্যথায় বড় আকারের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে।
জেলাশাসকের নির্দেশে বলা হয়েছে, লকডাউনের সময়কালে শিলচর, লক্ষ্মীপুর শহর, সোনাই শহর, কাটিগড়া বাজার, কালাইন বাজার, বাশকান্দি বাজার, ধলাই বাজার ও বড়খলা বাজারের ফার্মাসি ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সমস্ত সাপ্তাহিক বাজার ছাড়াও দ্বি-সাপ্তাহিক, প্রাত্যহিক, সকাল এবং সন্ধ্যার বাজারও বন্ধ রাখতে হবে। তবে গ্রামাঞ্চলে স্ট্যান্ড অ্যালোন দোকানগুলি সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা যেতে পারে।নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সমস্ত কাজকর্মে অনুমতি দেওয়া হবে। সব ধরনের সর্বজনীন নির্মাণকাজ, কৃষি এবং এ সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে জড়িত কার্যক্রম, চা বাগানের কাজকর্ম ও ক্রমাগত প্রক্রিয়াগুলির জন্য প্রয়োজন শিল্পগুলিকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। ব্যাংক ও ডাকঘর সহ সকল সরকারি দফতর এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে কোভিড-১৯ প্রটোকল অনুসরণ করে যথারীতি কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জেলাশাসকের নির্দেশে বলা হয়েছে।
যানবাহনগুলি কেবলমাত্র জরুরি উদ্দেশ্যে এবং কোভিড প্রটোকল অনুসরণ করে টেস্টিং কেন্দ্রগুলিতে এবং যাত্রীদের বহন করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা হল-এর টিকিট, আইডি কার্ড ইত্যাদি দেখিয়ে চলাফেরা করতে পারবেন। সমস্ত উপাসনাস্থল জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনও ধর্মীয় কাজ, খেলাধুলা এবং বিনোদন সহ সমস্ত ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং সামাজিক জমায়েত পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে, হাসপাতাল (সরকারি ও বেসরকার), ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক, ল্যাব এবং অন্যান্য কোভিড সম্পর্কিত কাজে প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহকারীদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধগুলি প্রযোজ্য নয়। আদেশে বলা হয়েছে, যানবাহন ও পণ্যাদির আন্তঃজেলা তথা ইরস্টেস্টেট চলাচলের জন্য আলাদা অনুমতি বা অনুমোদনের দরকার পড়বে না।
জেলাশাসক কীর্তি জল্লি তাঁর নির্দেশিকায় জেলা জুড়ে স্থাপিত কোভিড কাউন্সেলিং এবং স্ক্রিনিং সেন্টারগুলিতে প্রত্যেক নাগরিককে র্যাাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই ব্যবস্থা আগের এসিমপ্টমেটিক মামলার তুলনায় সিমপ্টমেটিক সংক্রান্ত মামলার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে। সংক্রমণের বিস্তার বিরতির প্রয়োজন অনুভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মানুষের জীবন রক্ষার্থে তাঁকে নিষ্ঠুর হতে হয়েছে।
জেলাশাসক তাঁর আদেশে আরও বলেছেন, এই নির্দেশাবলী লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৫-এর ৫১ থেকে ৬০ ধারার অধীনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইপিসির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই নিয়ম অন্য দুই জেলায়ও বলবত্ হবে।