শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালদা শহরে লক ডাউনের ৪ মাস ধরে গরিব শিশুদের খাওয়াচ্ছেন কাজল ঘোষ

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০২:৩৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

মালদা,  ২৮ জুলাই।  নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে লকডাউনের শুরু থেকে একটানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে গরিব পরিবারের শিশুদের বিনামূল্যে খাবারের আয়োজন করে চলেছেন জনৈক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কাজল ঘোষ (৫৫)। মালদা শহরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের নবকৃষ্ণপল্লী এলাকার জনৈক ওই ব্যবসায়ী কাজলবাবু খুব একটা অবস্থাসম্পন্ন না হলেও, সারা জীবনের জমানো অর্থ থেকেই অল্প অল্প করে গরীব ও পথশিশুদের জন্য রোজকার খাবারের ব্যবস্থাটুকু চালিয়ে যাচ্ছেন । শুধু শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করাই নয়, আশেপাশের এলাকার গরিব মানুষদের বাড়ি বাড়ি চাল, ডাল, আলু পিয়াজ সহ অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীও প্রায় দিনই বিলি করছেন কাজলবাবু।


কখনো কষা মুরগির মাংস - ভাত , সাথে ডাল সবজি । আবার কখনো ডিমের কালিয়া, পোনা মাছ থেকে রুই মাছের ঝোল, চাটনি রকমারি এরকম খাবার রোজকার মেনুতে আছে। যা একটানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে শিশুদের খাইয়ে যাচ্ছেন । প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন এলাকার গরিব শিশুদের এই খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন কাজলবাবু । সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি নিজের গোডাউন ঘরেই সোশ্যাল ডিসটেন্স বজায় রেখেই শিশুদের এক'বেলা পেটপুরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


বলাবাহুল্য , এইসব শিশুদের অধিকাংশ অভিভাবকেরা কেউ লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। আবার কারো বাবা দিনমজুর , জুতো সেলাই, ঝাল মুড়ি বিক্রির পেশায় যুক্ত। কিন্তু লকডাউনের জেরে কর্মহীন ওইসব দিনমজুরের পরিবার বড়দের পেটে খিদের জ্বালা সহ্য হলেও , ছোটরা কিন্তু তা সহজেই সহ্য করতে পারে না । আর সেইসব দরিদ্র অসহায় পরিবারের শিশুদের কথা মাথায় রেখেই রোজকার দুপুরে খাবারের আয়োজন করেছেন এলাকার জনৈক ব্যবসায়ী কাজল ঘোষ।


কথায় বলে , "বসে খেলে রাজার ধনও শেষ হয়"। অবস্থাটা এখন ঠিক সেই জায়গায় পৌঁছেছে কাজলবাবুর । কিন্তু মনোবল , উদ্যমের জেরে নিজেরেই উদ্যোগ থামিয়ে রাখেন নি কাজলবাবু। তাঁর সঞ্চিত অর্থ খরচ  করেই চলছে রোজকার গরীব ও অসহায় শিশুদের পেটপুরে খাওয়ানোর পালা।


মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায় শিশুদের দুপুরের আহার হিসেবে দেওয়া হয়েছ ভাত, ডাল, পাঁচমিশালি সবজি, পাপড় ভাজা, কাটা মাছের ঝোল, চাটনি, একটি করে রসগোল্লা। আর সেই খাবার তদারকি করছে এলাকার যুবকেরা।


স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন দাস বলেন , আমরা কাজলবাবুর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছি। তাই পাড়া-প্রতিবেশীরা সকলে মিলে এই কাজে হাত লাগিয়েছি । রোজকার রেল লাইনের ধারে অসহায় দরিদ্র পরিবারের শিশুদের এক'বেলা অন্তত খাওয়াতে পেরে আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করছি। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ জন শিশু খাচ্ছেন। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা এই দক্ষযজ্ঞ চলছে।


জনৈক ব্যবসায়ী কাজল ঘোষ বলেন, আমার ছোটখাটো জমি জায়গার ব্যবসা রয়েছে। তবে সঞ্চিত অর্থের সিংহভাগই খরচ করে ফেলেছি এই কাজে।  করোণা পরিস্থিতি যতক্ষণ স্বাভাবিক না হচ্ছে, আমি অসহায় ,দরিদ্র শিশুদের রোজ খাওয়ানোর ব্যবস্থা চালিয়ে যাব। 


ইংরেজবাজার পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপার্সন তথা বিধায়ক নিহার ঘোষ বলেন, কাজল ঘোষ নামের ওই ব্যক্তির এরকম উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। উনার কথা শুনেছি । উনি এলাকার গরিব শিশুদের রোজ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন।  এই দুঃসময়ে অসহায় এবং গরীব ঘরের শিশুদের এরকম ভাবে সহযোগিতা করার জন্য আমরা কুর্নিশ জানাই।ছবিিিিিি

 

-------- করোণা সংকটের মধ্যে গরিব পরিবারের শিশুদের বিনামূল্যে আহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে নবকৃষ্ণপল্লী এলাকায়।