রায়গঞ্জের ছন্দম মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল সৌহার্দ্য নাট্যানুষ্ঠান
বেদশ্রুতি মুখার্জী
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০১:৫৯ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২০ শুক্রবার
গত ৪ঠা মার্চ রায়গঞ্জের ছন্দম মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সৌহার্দ্য নাট্যানুষ্ঠান। রায়গঞ্জের ছন্দম নাট্যগোষ্ঠীর আয়োজনে বাংলাদেশ থেকে আগত দিনাজপুর নাট্য সমিতির প্রযোজনায় ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রফেশনাল থিয়েটার ক্রাউন থিয়েটার এবং বিখ্যাত নাট্যকার তথা অভিনেতা অর্ধেন্দূশেখর মুস্তাফির ব্যক্তিজীবনের রোমাঞ্চকর টানাপোড়েনকে উপজীব্য করে "কনক সরোজিনী" নাটকটি প্রদর্শিত হয় এবং আপনার দর্শকমহলে প্রশংসার জোয়ার তোলে। আকর্ষণীয় আবহসঙ্গীত, নিরাড়ম্বর মঞ্চসজ্জা, অনবদ্য রূপসজ্জা, প্রত্যেকের বাস্তবোচিত এবং অসাধারণ অভিনয়, অনন্য কাহিনি বুনন নাটকটিকে অন্য মাত্রা প্রদান করে। কাহিনি গ্রন্থনে মাহমুদুল ইসলাম সেলিম, নির্দেশনা এবং সার্বিক পরিকল্পনা, আলো ও আবহেও নয়ন ব্যাটেল, মঞ্চ পরিকল্পনায় ফজলে রাব্বী সুকর্ণ, আলো প্রক্ষেপণে রাজীব আহমেদ ও জাহেদ নবী, সঙ্গীতে অমিত রায় ও কনক, প্রযোজনা অধিকর্তা- জনাব কাজী বোরহান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন রেজাউর রহমান রেজু। অভিনয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই একে অপরকে স্বীয় দক্ষতায় ছাপিয়ে গিয়েছেন, নামভূমিকায় কনক সরোজিনীরূপে ছিলেন অতি রূপসী ও ততোধিক গুণী অভিনেত্রী সুপ্রীতি প্রিয়া, রাখাল চন্দ্র বসাকের ভূমিকায় সম্বিত সাহা, অর্ধেন্দূশেখর মুস্তাফির ভূমিকায় স্বয়ং নির্দেশক নয়ন ব্যাটেল এবং সরলাদেবীর ভূমিকায় কথক এর অভিনয় অবিস্মরণীয়, তাছাড়াও বাকি সকলেও অনবদ্য। প্রত্যেকের শরীরী ছন্দই যেন নাটকে সশব্দে দৃশ্যমান, শরীরী বিহঙ্গে মুহূর্তেই ঊনিশ শতকীয় নাট্য জগতের রেষারেষির প্রেক্ষাপট উপনীত হয় মুঘল আমলের সাজাহান ঔরঙ্গজেব দ্বন্দ্বে। অর্ধেন্দূশেখর মুস্তাফি যেন ভালো ও মন্দের এক ককটেল। পরিস্থিতির শিকার ও ভালোবাসায় প্রতাড়িত কনক সরোজিনীর মধ্যে শেষদিকে যেন সূক্ষ্ম লেডি ম্যাগবেথের ছায়া দর্শক হৃদয়ে অনুরণন তোলে। নাটকের শেষ দৃশ্যে নেগেটিভ রাখাল বসাকের ইতিবাচক পরিবর্তন এক অবিস্মরণীয় টুইস্ট। এককথায় ঊনবিংশ শতকের নাট্যচর্চার ও ক্রাউন থিয়েটার এর বিস্মৃত সময়ের জলন্ত দলিল এই নাটকটি, যা দর্শক আসনে বসা রায়গঞ্জের বিশিষ্ট জন এবং নাট্যরসিক আমজনতার হৃদয়ে আলোড়ণ তুলেছিল।