আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরে প্রতি মাসে ১কোটি ৯৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা
হক নাসরিন বানু
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১০:১৫ পিএম, ৩ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার
আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরে প্রতি মাসে ১কোটি ৯৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার তোলাবাজির অভিযোগ।
মালদা ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহদীপুর আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরে প্রতি মাসে ১কোটি ৯৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার তোলাবাজির অভিযোগ। অভিযোগের তীর এলাকার দুই তৃণমূল নেতা প্রসুন ঘোষ ও চন্দন ঘোষের বিরুদ্ধে। জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়ে কোন লাভ না হওয়ায় এবার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন লরি মালিকেরা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সীমান্তে চলাচলকারি লরি মালিকদের সংগঠন গৌড় ট্রাক অনার্স অ্যাসোসিয়েশন।ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। গোটা ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও কংগ্রেস বিধায়ক মুত্তাকিন আলম।
এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ এসেছিল আবার এই অভিযোগ হলে এতে দলের কেউ থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসাম বেনজির নুর।
অভিযুক্ত প্রসেন ঘোষের স্ত্রী লিপিকা ঘোষ বর্মন ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। পাশাপাশি আরেক অভিযুক্ত চন্দন ঘোষের স্ত্রী স্থানীয় মহদীপুর পঞ্চায়েতের প্রধান।এই ঘটনায় উঠেছে আর এক বর্ডার মাফিয়ার নাম নিখিল ঘোষ। প্রসূন ঘোষ ও চন্দন ঘোষ দুজনেই ইংলিশবাজারের তৃণমূল বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ ও স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য প্রতিভা সিংহের ঘনিষ্ঠ।
ট্রাক চালকদের অভিযোগ প্রতিদিন মহদীপুর আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর দিয়ে প্রায় ৩০০ ট্রাক পণ্য সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশের যায়। এই দুই তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে একদিনে প্রায় আড়াই হাজার টাকা করে তোলা আদায় করে। মাসে প্রায় কোটি টাকা আদায় করা হয়। টাকা না দিলেই চলে গাড়ি চালকদের মারধর। পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লরি থেকে ব্যাটারি খুলে নেওয়া হয়। মাল চুরি করা হয়। যার ফলে তাদের প্রতিদিন ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়। এছাড়াও আর তা না দিলেই মাফিয়াদের হাতে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হয় লরি চালক ও খালাশিরা।
জেলাশাসক পুলিশ সুপার থেকে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকার ফলে এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। মুখ্যমন্ত্রী মালদায় আসছেন । তিনি যাতে গোটা বিষয়টি নজর দেন। অন্যান্য সব বন্ধ বেসরকারি পার্কিং রয়েছে। একমাত্র এই বন্দরে সরকারি পার্কিং নেই। যার ফলে যে টাকা সরকারের ঘরে যাওয়ার কথা। সেই টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে এই মাফিয়ারা। এভাবে চলতে থাকলে তাদের পক্ষে এই সীমান্তে লরি চালানো সম্ভব হবে না।
সীমান্তের কাঁটাতারের ৫০০ মিটারের মধ্যে কিভাবে বেআইনি পার্কিং চলে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তর মালদা সংসদ খগেন মুর্মু। তিনি বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিতে নজর দেওয়া উচিত। আমি সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং এই তোলাবাজির বিরুদ্ধে সংসদে সরব হব। এছাড়াও দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহের কাছে সীমান্তের এই গাড়ি পার্কিং অভিযোগ জানাবো।
জেলা কংগ্রেস বিধায়ক মুস্তাকিম আলম বলেন দীর্ঘদিন ধরে এখানে তোলাবাজি চলছে। শাসক দলের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু মাফিয়া পুলিশের একাংশের সাথে যোগসাজোশ করে এই তোলাবাজির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিমাসে প্রায় কয়েক কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমি এর আগে বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় সরব হয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মালদায় আসছেন এই বিষয়টিতে তিনি যাতে নজর দেন।
মালদা সফরের প্রাকমুহুর্তে দলীয় ২ নেতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠায় চরম অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূলের সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূর বলেন, আমাদের দল এগুলো বরদ্বাস্ত করবে না। এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ করেছিল কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল আবার অভিযোগ উঠছে দলের কিন্তু তাদের দল ব্যবস্থা নেবে।
জেলাশাসক রাজশ্রী মিত্র ক্যামেরার সামনে কোনো বিবৃতি না দিলেও তিনি জানিয়েছেন অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হবে।