রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঘর কোথায়? মানুষের ঘর আর উপন্যাসের ঘর, কবি, শিক্ষাবিদ ও কথাকারের

পুষ্প প্রভাত ডেক্স

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রোববার

কলকাতা,

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কবি ও প্রাবন্ধিক  অনিকেত মহাপাত্রের লেখা ‘উপন্যাসের ঘরে’ নামের গ্রন্থটি আজ প্রকাশিত হলো প্রখ্যাত কবি জয় গোস্বামী এবং কবি সুবোধ সরকার, শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক  অভীক মজুমদার, কথাসাহিত্যিক শুভময় মন্ডলের হাতে অর্পণের মাধ্যমে। গ্রন্থটির প্রকাশক হলেন কবি ও প্রাবন্ধিক ফারুক আহমেদ এবং তাঁর উদার আকাশ ও সমনামী পত্রিকা ও প্রকাশন ইতোমধ্যে বুধমন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আড়ম্বর আয়োজনের বিষয়টি যেহেতু লেখকের বরাবরের অপছন্দের, তাতে সায় দিয়েছিলেন প্রকাশক তাই অনাড়ম্বরভাবে ঘরোয়া পরিবেশে চায়ে পে চর্চার ফাঁকে ফাঁকে হয়ে গেলো গ্রন্থ প্রকাশ। আর দিনটা যেহেতু একুশে ফেব্রুয়ারি তাই এইদিনটির  মাহাত্ম্য নিয়ে কারোর সন্দেহ নেই। বাংলা অকাদেমির চৌহদ্দির মধ্যে হয়ে গেলো গ্রন্থটির প্রকাশ এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সন্ধ্যায়। লেখক অনিকেত মহাপাত্র প্রায়শই বলেন-- বিদ্যায়তনিক শিক্ষা যদি হয় তাঁর স্ত্রী, কথাসাহিত্য তাঁর শ্যালিকা আর কবিতা তাঁর পরকীয়া।

সেকারণে বোধহয় কবিদের হাতে বইয়ের প্রকাশ -বার্তা ঘোষিত হোক এটি তাঁর অভিপ্রায় ছিল। ইতোমধ্যে সারা রাজ্যে চর্চিত। পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক নিয়োগের পরীক্ষায় তিনি বাংলা বিষয়ে সারা রাজ্যে প্রথম হয়েছেন। প্রাবন্ধিক হিসেবে তাঁর পরিচিতিও যথেষ্ট। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রবন্ধ সমাদৃত হয়েছে। এই বইটিও পাঠকদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করবে সেই কথা বলাই বাহুল্য। 

কেন গ্রন্থের নাম উপন্যাসের ঘরে  তা নিয়ে লেখকের যা বক্তব্য --- মানুষের ঘর ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক। ঘরের খোঁজ চলে সারা জীবন জুড়ে। আর সম্ভবত তা মেলে না কোনো দিন। তাই মানুষ চির উদ্বাস্তু। লেখকের নামে সেই ঘ্রাণ পাওয়া যেতে পারে। যার নিজের কোনো ঘর নেই সব খানে তার ঘর। তাঁর নামের এইরকম ইন্টারপ্রিটেশন তিনি করেন। 
মোট ষোলোটি প্রবন্ধ নিয়ে গ্রন্থটি বিন্যস্ত। দেড়শো বছরের কিছু বেশি সময়কে ধরেছেন তিনি। এই বয়স অবশ্যই বাংলা উপন্যাসের বয়স। সেই সূচনা লগ্নের উপন্যাস থেকে শুরু করে দুহাজার আঠেরো পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাসও এতে স্থান পেয়েছে। প্রায় বিস্মৃত লেখক কৃষ্ণকমল ভট্টাচাৰ্য এর উপন্যাস দুরাকাঙ্খের বৃথা ভ্রমণ নিয়ে এক মনোজ্ঞ আলোচনা আছে। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক ব্যাতিক্রমী দৃষ্টান্ত হিসেবে এই রচনাটি বিবেচিত হয়। আছে বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পর্কে বৈবাহিক দামোদর মুখোপাধ্যায় এর উপন্যাস ও সেই সূত্র ধরে চিরকালের পপুলার লিটারেচার ও অফবিট লিটারেচার এর দ্বান্দ্বিক দিকটি তুলে ধরেছেন। আর হাল আমলের ব্যাতিক্রমী উপন্যাস নব পর্যায়ের গ্রামবার্তা প্রকাশিকা  নিয়ে আলোচনা। কথা সাহিত্যিক স্বপন পান্ডার উপন্যাসটি নিয়ে লেখক যেভাবে আলোচনা করেছেন তাতে বোঝা যায় সমালোচনা কখনো কখনো কীভাবে সৃজনশীল সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে। এই গ্রন্থের উদ্বোধক ও প্রকাশক যেমন ভাবে মুগ্ধ, আম পাঠককূল সেই ভাবে মজবেন এটি আশা করা যায়। আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের সন্ধ্যায় অনাড়ম্বর এই গ্রন্থ প্রকাশ তথাকথিত জৌলুসমাখা, সাজানো অনেক কিছুর সামনে এক বিকল্প ভাষ্য বহন করবে।