মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কাঁধেই মালদা তৃণমূলের
হক নাসরিন বানু
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৯:০৫ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কাঁধেই মালদা তৃণমূলের সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কাঁধেই মালদা জেলার তৃণমূলের সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন। একই সঙ্গে তৃণমূল দলের মালদা জেলা সভানেত্রী মৌসম নুরকে মালদা জেলা সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে একগুচ্ছ ক্ষমতা দিয়ে গেলেন। মৌসম নুরের নির্দেশ মেনে যে মালদা জেলায় তৃণমূল নেতা কর্মীরা সংগঠনকে এগিয়ে যাক, এমনটাই চাই দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর ইচ্ছা। মঙ্গলবার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে তা কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সাংগঠনিক ভাবে দুইটি পরিবর্তনও করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক শুরুর আগেই মালদায় তৃণমূলের প্রথম সারির প্রায় সব নেতানেত্রীকে নিয়েই একান্তে বৈঠক সারেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে ওই বৈঠকে ছিলেন না দুই প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ন চৌধুরি ও সাবিত্রী মিত্র। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূতনি সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সাবিত্রী মিত্রকে সেখানে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। অন্যদিকে, কৃষ্ণেন্দু নারায়ন চৌধুরির বক্তব্য, দলের জেলা সভানেত্রী তাঁকে ওই বৈঠকে থাকার কথা বলেন নি।
এই দুইজন ছাড়া, মৌসম নুর, মোয়াজ্জেম হোসেন, সমর মুখোপাধ্যায়, নীহার রঞ্জন ঘোষ, গৌরচন্দ্র মণ্ডল, বাবলা সরকার, সাবিনা ইয়াসমিন, দিপালী বিশ্বাস, অম্লান ভাদুড়ি, সুমালা আগরওয়ালা, চৈতালি সরকার প্রসূন রায়, মানব বন্দ্যোপাধ্যায়, আবু নাসের খান চৌধুরি, শেহনাজ কাদরি সহ প্রায় ৩৫জন ডাক পেয়েছিলেন। ছিলেন ‘টিম মৌসমের’ কোর কমিটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও।
এদিন ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির বাড়বাড়ন্ত রুখতে জেলা তৃণমূল আদিবাসী সেলের সভাপতি পদে পরিবর্তন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চুনিয়া মুর্মু’কে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ তথা প্রাক্তন সভাধিপতি সরলা মুর্মু’কে।
একই সঙ্গে সরানো হয়েছে জেলা তৃণমূল ক্ষেত মজুর সমিতির সভাপতি রঞ্জন সিংহকেও। তাঁর জায়গায় আসছেন মালদা হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তাজমুল হোসেন।
এদিন মালদার দলীয় পর্যবেক্ষক সাধন পাণ্ডে আর থাকবেন না বলেও জানিয়েছেন দলনেত্রী। কয়েক দিন আগেই দুঁদে তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারিকে ফের মালদা জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এদিন মুখ্যমন্ত্রী দলীয় সভায় বলেন, “শুভেন্দু দেখছে। তবে ওঁর অনেক ব্যস্ততা রয়েছে। এখন থেকে মালদা জেলার দলের সংগঠন সরাসরি আমিও দেখব।‘তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের দলীয় বৈঠকে মালদায় মৌসমের নেতৃত্বে আরও একবার পূর্ণ আস্থা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, মৌসম হয়তো বয়সে অনেকের চেয়ে ছোট কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না মৌসম দুইবারের সাংসদ। একবার বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছেন। একটি রাজনৈতিক দলের জেলা সভাপতি হিসাবে সংগঠন পরিচালনার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে মৌসমের। সুতরাং মৌসমের উপর আস্থা রেখেই ওঁর নেতৃত্বে আপনারা মালদা জেলায় সংগঠন পরিচালনা করুন।খুব দ্রুত ব্লক ও জেলা কমিটি তৈরি করে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্যও মৌসম নুরকে মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের নিজের এলাকা উন্নয়ন নিয়েও তদ্বির করেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। দলনেত্রী বলেন, রাজ্য সরকার মালদহের জন্য অনেক কিছু করছে। আগামীতেও করবে। কিন্তু তোমরা সংগঠনটা ভালো করে করো। নির্বাচনে ভালো ফল করে দেখাও। তবেই আমরা আরও বেশি ঝাঁপিয়ে পড়ব। তবে যাই হোক মালদা জেলাকে সাজিয়ে দিয়ে রাজ্য সরকার কোনও কার্পণ্য করবে না। এদিন দুই পুরসভা’র অনাস্থা প্রসঙ্গে দলীয় নেতা নেত্রীদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। দলের নেতা কেউ নয়। দলের নেতা ঘাস ফুল। তৃণমূল সাধারণ মানুষের দল তা পদে পদে মনে রাখতে হবে। দলের স্বার্থে সবাইকে এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নীহার রঞ্জন ঘোষ, বাবলা সরকার সহ পুরসভার সব কাউন্সিলরদের ঐক্যের আবহে পুরসভা পরিচালনার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দলের সুপ্রিমো’র ভরসাস্থল হয়ে উঠতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মৌসম নুর। তিনি বলেন, আমি বা আমরা কেউ নই। আমাদের একটিই পরিচয় আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। আমরা তাঁর নির্দেশেই চলবো। দলনেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার নেই। তাঁর নির্দেশ ও পরামর্শ অনুযায়ীই মালদহে দল প্রতি পদক্ষেপে পরিচালিত হবে বলে জানান জেলা তৃণমূল সভানেত্রী।