রেলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রাজদীপ, ডেকে পাঠালেন জিএমকে
দিদারুল ইসলাম
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৭:১১ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার
রেলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রাজদীপ, ডেকে পাঠালেন জিএমকে।
শিলচর ২২ অক্টোবর :- শিলচর রেল স্টেশনে টিকিট জালিয়াতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়। সম্প্রতি রেল স্টেশনে দুর্নীতির অভিযুক্ত আধিকারিককে বহাল তবিয়তে রাখায় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর উত্তর পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জীব রায়কে শিলচর ডেকে পাঠিয়েছেন সাংসদ রাজদীপ। এ মাসের শেষেই শিলচরে আসবেন বলে কথা দিয়েছেন জিএম।উল্লেখ্য, তৎকাল টিকিট নিয়ে জালিয়াতি এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে মাস চারেক আগে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন শিলচরের রেলকর্মী অর্পিতা দাস। বিভাগের অ্যান্টি ফ্রড শাখা গত ৩ জুন সকাল ১১টায় তার কাউন্টারে হানা দিয়ে কিছু বেনামি টিকিট এবং টাকার জালিয়াতি ধরেছিল। ছয় মাসের ইনক্রিমেন্ট কর্তন সহ বিভাগের তরফে অন্যান্য শাস্তি পেয়েছিলেন কর্মীটি। সেই অর্পিতা দাসকেই শিলচর রেল স্টেশনের চিফ রিজার্ভেশন সুপারেনটেনডেন্ট (সিআরএস) ইনচার্জ হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে। একজন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আধিকারিককে আবার শিলচর রেল স্টেশনে নিযুক্তি দিয়ে প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে রেল বিভাগ। সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে ফলাও করে প্রচার করছে, সেই সময় রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নরম মনোভাব পোষণ করছে।
অর্পিতা দাস এতদিন শিলচরে রেলস্টেশনের এসিস্ট্যান্ট রিজার্ভেশন সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিলেন। প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রেল বিভাগে রয়েছেন তিনি। অতীতে বেশ কয়েকবার তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ৩ জুন সকালে এগারোটা নাগাদ বিভাগের দুর্নীতি দমন শাখা আচমকা কাউন্টারে হানা দেয় এবং অর্পিতা দাসের কাউন্টার থেকে বেশকিছু সন্দেহজনক তথ্য উদ্ধার হয়। বিভাগের সূত্র মতে, সরকারি ক্যাশবাক্সে প্রায় কুড়ি হাজার টাকার গরমিল সহ বেশ কিছু বেনামী টিকিট উদ্ধার হয় এদিন। এর উপর ভিত্তি করে অর্পিতা দাসের ছয় মাসের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা এবং তাকে তার পদ থেকে নিচু পদে স্থানান্তরিত করা হয়। এছাড়াও আরও কিছু কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পাশাপাশি কোনও ধরনের আর্থিক লেনদেন থাকা কাউন্টারে তাকে না রাখার উদ্দেশ্যে লালাবাজার স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের। কিন্তু সেখানেও স্টেশন মাস্টারের আইডি ব্যবহার করে টিকিট কাটতে শুরু করেন অর্পিতা। স্থানীয় এক ব্যক্তি বিভাগকে চিঠি লিখে জানান, অর্পিতা দাস তার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে টিকিট দিচ্ছেন। বিভাগের আভ্যন্তরীণ স্তরে এনিয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেটা পরিষ্কার না হলেও অর্পিতাকে লালাবাজারও ছেড়ে আসতে হয়। তাকে প্রথমে রামনগরে স্থানান্তরিত করা হয় এবং বদরপুরে পাকাপাকিভাবে ট্রান্সফারের তোড়জোড় শুরু হয়। তবে পরিবারের বয়স্ক সদস্যের শারীরিক অবনতির অজুহাত দেখিয়ে অর্পিতা শিলচরে ফিরে আসার আবেদন জানান। মানবিকতার খাতিরে রেল বিভাগ তার আবেদন টুকু মেনে নেয়। নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে’র উচ্চপদস্থ আধিকারিক প্রণব জ্যোতি শর্মা ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করেন। রাজদীপ রায় সম্প্রতি নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জীব রায়ের সঙ্গে এব্যাপারে সরাসরি কথা বলেছেন। সোমবার তিনি দিল্লি থেকে ফোনে সংবাদমাধ্যমকে জানান, রেল বিভাগের বিভিন্ন দুর্নীতির কথা আমরা শুনেছি এবং সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় এগুলো পড়ে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। এসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে, এর বাইরেও অনেক দুর্নীতি বিভাগে রয়ে গিয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। সবগুলো ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে হবে। তাই উত্তর পূর্ব রেলের জিএমকে শিলচরে আসতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি এমাসের শেষে শিলচরে আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। তার উপস্থিতিতে বিভাগের সব ধরনের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।