পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে শুরু হলো দেবীপক্ষের সূচনা,
পল মৈত্র
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৩:২৭ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার
পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে শুরু হলো দেবীপক্ষের সূচনা, সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রান্তে চলছে তর্পণ,
,দক্ষিণ দিনাজপুরঃআজ মহালয়া, পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের সূচনা। ভোরের আলো ফুটতেই ঘাটে ঘাটে শুরু হয়েছে তর্পণ। ভোর থেকেই শুরু হয়েছে পিতৃপুরুষের উদেশ্যে জলদান। সেই মতো সারা রাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন মন্দির ও নদীতে দুধ দিয়ে ভোর থেকেই চলে তর্পণ। এলাকার বহু মানুষ দুধ পুকুরে তর্পণ করেন তাই মন্দিরে সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়ে।
মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা পা রাখলেন মর্ত্যলোকে। অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হওয়ার পর চারদিকে শুরু হয় অশুভ শক্তির পরাক্রম। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। তখন দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা।
চন্ডীপাঠের মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আহ্বানই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই ‘চন্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় ভোরবেলা স্ত্রোত্রপাঠ শুনে দিন শুরু করাটা বাঙালি রেওয়াজ। বছর বছর ধরে এই একটি ঐতিহ্য বাঙালি আজও একইভাবে ধরে রেখেছে। সেই অর্থে দুর্গাপুজোর আভাস মেলে এই মহিষাসুরমর্দিনীর বিশেষ বেতার অনুষ্ঠানেই। আসলে এই দিনটি তর্পণের দিন। এই দিনের সাথে দুর্গাপুজোর বা অকালবোধনের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। বরং পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতেই আজ গঙ্গায় বা অন্য নদীতে অনেকে তর্পণ করেন। মহালয়া তর্পণের মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটায়। সামনে পুজো বলেই তারপর থেকে বাঙালীর দেবীপক্ষ শুরু হয় অলিখিতভাবে।
আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যা আসে তাই মহালয়া—পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন।
আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যাকে আমরা মহালয়া হিসাবে চিহ্নিত করি, সেই দিনটি হচ্ছে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন। পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার মাধ্যমে এই দিনটিতে আমরা আমাদের এই মানব জীবনকে মহান করে তুলতে প্রয়াসী হই বলেই এই পূণ্যলগ্নটিকে মহালয়া বলা হয়।
মহালয়া এলেই বাংলার মাটি-নদী –আকাশ প্রস্তুত হয় মাতৃপূজার মহালগ্নকে বরণ করার জন্য। কাশফুল ফুটলে শরৎ আসে, না শরৎ এলে কাশফুল এসব নিয়ে বিস্তর তর্ক চলতে পারে। কিন্তু মহালয়া এলেই যে দূর্গাপূজা এসে যায়, তা নিয়ে তর্কের কোনও অবকাশ নেই। মহালয়া এলেই সেই দেবী-বন্দনার সুর ধ্বনিত হয় বাংলার হৃদয়ে। দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ। বুকের মধ্যে জাগে আনন্দ-শিহরিত কম্পন, মা আসবেন।
শরতের শিশির ভেজা ঘাসে অরুণ রাঙা চরণ ফেলে দেবীপক্ষের সূচনা, চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যালোকে আমন্ত্রণ দেবী দুর্গাকে। কাশ ফুলের দোলায়, সবুজ ঘাসের ওপর শিউলি ফুলের গালিচায় চোখ মেললেই দেখতে পাই মা এর আগমনী বার্তা । শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। মহালয়া শব্দের আক্ষরিক সমার্থ হলো ‘আনন্দ নিকেতন’।দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন অর্থাৎ পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বাৎসরিক লক্ষ্মীপূজার দিন হিসাবে গণ্য হয়। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি। মা মহালয়ার দিন পা রাখলেন মর্তলোকে, পূজোর আর মাত্র ছয় দিন বাকি। সর্বশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া।
আশ্বিনের শারদপ্রাতে যখন বেজে উঠবে ‘আলোক মঞ্জির’, বাঙালির অবচেতনে আলো-আঁধারির খেলায় ভেসে উঠবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের অদৃশ্য উপস্থিতি। তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে আজও বেঁচে আছে শারদোৎসবের সেই অনন্য আবেগ।
"বাজল তোমার আলোর বেনু ,মাতল রে ভুবন
আজ প্রভাতে , সে সুর শুনে, খুলে দিনু মন" এই গানেই আজ মহালয়ার দিন থেকেই আনন্দে মেতে উঠেছেন আবালবৃদ্ধবনিতা।