রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঋণের সুদ ৯ শতাংশ করতে ব্যাংকগুলোর টালবাহানা 

ইমন রহমান

দৈনিক জাগরণ

প্রকাশিত : ০৫:৫৯ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ করার নির্দেশ মানছে না ব্যাংকগুলো। নানা প্রতিবন্ধকতার কথা বলে এ নির্দেশ মানতে টালবাহানা শুরু করেছে। সুদের হার না কমালেও সুদহার কমানোর কথা বলে সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু সুবিধা নিয়েছে ব্যাংকগুলো। যেসকল ব্যাংক সরকারি সুবিধা নিয়েছে কিন্তু সুদের নতুন হার কার্যকর করেনি তাদের পরিদর্শনের আওতায় আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে আমানতে ৬ শতাংশ ও ঋণ বিতরণে ৯ শতাংশ সুদের হার নির্ধারণের ঘোষণা দেয়। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সুদের এই নতুন হার কার্যকরের কথা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে নতুন সুদহার কার্যকর করেনি ব্যাংকগুলো। গত আগস্টে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকের মালিক ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে ৯ আগস্ট থেকে নতুন সুদ হার কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেন। ব্যাংক মালিকরা ঘোষণা দিলেও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বলে আসছে, সহসাই এ হার কার্যকর সম্ভব নয়। এদিকে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি এর পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

জানা গেছে, এখনো কিছু কিছু ব্যাংকের সুদহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। দীর্ঘ সময়েও নতুন সুদহার বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বিপাকে রয়েছেন। তারা চড়া সুদের কারণে নতুন শিল্প স্থাপন ও বিদ্যমান শিল্প প্রসারে আগ্রহী হচ্ছেন না। এতে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মূলত বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের দাবি, ঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর হলে ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সংকটের মুখে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকমালিক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এদিকে সুদহার কমানোর কথা বলে কয়েকটি নীতিগত সুবিধা আদায় করে নেয় বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি। ব্যাংকগুলো ঘোষিত সুদহার কার্যকর করেছে কি না, তা জানতে গত সেপ্টেম্বরে ২৮ ব্যাংকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই চিঠিতে কোন কোন খাতে সুদহার কমানো হয়েছে, তা জানাতে বলা হয়। কমানো না হলে তার কারণ জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অনেক ব্যাংক ওই চিঠির জবাব দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির জবাবে একটি ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৯ শতাংশের বেশি। এজন্য এই মুহূর্তে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করা অসম্ভব। হঠাৎ করে এটি কার্যকর করলে ব্যাংকের আয় কমে যাবে। অস্থিরতা দেখা দেবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ এ সংকটের কারণে ব্যাংকের সুনামও ক্ষুণ্ণ হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ব্যাংকটি পর্যায়ক্রমে এটি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে।

যেসব ব্যাংক নীতিগত ছাড় সুবিধা গহণ করেছে, তাদের অবশ্যই সুদহার কমাতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংক সরকারি ব্যাংক থেকে ৬ শতাংশ সুদে আমানত পেয়েছে, সরকারি আমানত পাচ্ছে, সিআরআর কম রাখছে, এডিআর সীমা এখনো নামিয়ে আনেনি, তাদের পরিদর্শনের আওতায় আনা হচ্ছে। সুবিধাগ্রহণের পরও কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি, তার জবাব চাওয়া হবে তাদের কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, নতুন ঘোষিত সুদহার কার্যকর করেনি অধিকাংশ ব্যাংক। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আমরা পরিদর্শনও করছি। তিনি বলেন, সুদের হার না কমানোর পক্ষে তাদের যুক্তিও বাস্তবসম্মত। যেসব ব্যাংকের সুদহার অতিদ্রুত কমানো সম্ভব ছিল, সেই ধরনের ২৮ ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। ওই সব ব্যাংক কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।