নাশকতার আগুনে আজও জ্বলছে আবুলের পরিবার
রিকু আমির
দৈনিক জাগরণ
প্রকাশিত : ০১:০০ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার
নাশকতার আগুন আজও যন্ত্রণায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আবুল হোসেন ও তার পরিবারকে। প্রায় চার বছর আগে রাজনৈতিক সহিংসতার আগুনে ঝলসে গিয়েছিলো আবুলের মুখ, মাথা, কান, দু-হাত, পা ও পিঠ।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আবুল হোসেনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। রূপগঞ্জের বরাব বাসস্ট্যান্ডের কাছে ভাড়া বাসায় থাকেন আবুল স্বপরিবারে।
আবুল বলেন, পোড়া জায়গায় এখনো ব্যথা লাগে, মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট হয়, প্রচুর চুলকায়। ব্যথার যন্ত্রণায় রাতে ঘুম হয় না।
বিএনপি-জামায়াতের টানা কর্মসূচি চলাকালে ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে নিক্ষেপ করা পেট্রোল বোমায় ঝলসে যান আবুল। শুধু আবুল-ই নন, এ বাসের প্রায় ৩০জন যাত্রী দগ্ধ হন। এর মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলেও পড়েন।
ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবুলের কণ্ঠস্বর শুকিয়ে আসে। তিনি বলেন, ঢাকার কাঁঠালবাগান থেকে রূপগঞ্জে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। আশপাশে থাকা লোকজন চেষ্টা করে গায়ের আগুন নিভিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যান। পরে একজন সাংবাদিক তার স্ত্রী রিনাকে খবর দেন।
রূপগঞ্জে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিফাতকে নিয়ে বাস করেন আবুল।
রিনা জাগরণকে বলেন, ‘ওই দিনগুলার কথা মনে হলে বুকটা ভেঙে যায়। খোদার মেহেরবানিতে আমি বিধবা হইনি, আমার ছেলে এতিম হয় নাই’। বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন রিনা।
নাশকতার আগুনে পোড়ার আগে আবুল একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। কিন্তু বেতন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেটা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। নতুন কাজের সন্ধানে ঘটনার দিন কাঁঠালবাগান গিয়েছিলেন আবুল।
বর্তমান অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রিনা বলেন, ‘যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঞ্চয়পত্র না দিতো, তাহলে না খাইয়া মরতাম। এখনও সেই টাকা প্রতি মাসে পাচ্ছি। উনার জন্য প্রাণ ভইরা দোয়া করি। আর যারা আগুন দিছে, বিএনপি-জামায়াত, হেরা যাতে ভুইগ্গা মরে। তাগো কারণে আজকা আমার স্বামীর এই অবস্থা।’
তিনি বলেন, বর্তমানে আবুল বেকার। মাঝেমধ্যে শারীরিক সমস্যা লেগেই থাকে, প্রতি মাসেই দেখাতে হয় চিকিৎসক। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদান হিসেবে প্র্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পাই। এ দিয়েই টানাহেঁচড়া করে চলি। রিনা বলেন, তার গায়ে পোড়া দাগ দেইখা নিতে চায় না।
আবুলের ছেলে রিফাত স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এখন ছেলেকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখেন রিনা। কিন্তু পরিবারের আয় না থাকায় ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
রিনা বলেন, ছেলে বড় হবে, খরচও বাড়বে। কিন্তু আমাদের আয়? তিনি তার ছেলের পড়লেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।