শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাবিরের ডাক্তার হয়ে গরিবের সেবা করাই বাধা অর্থসঙ্কট

মোহঃ নাজিম আক্তার

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০১:৫৬ পিএম, ৩০ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

হরিশ্চন্দ্রপুর 

 বাড়ির নিকটেই তুলসীহাটা বাস স্ট্যান্ডে ফলের দোকান ।সেই দোকানের উপর নির্ভর করেই একান্নবর্তী পরিবারে নয় জনের পেট চলে ।এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এমন এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে 443 নম্বর পেয়ে সকলের নজর কেড়েছে ।তার নাম সাবির আলি।চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সাবির ।তাই তিনি ও তার বাবা মা এখন সরকারি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছেন ।

হরিশ্চন্দ্রপুর - ১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা সেখ সলেমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ।তিনি তুলসীহাটা বাস স্ট্যান্ডে ফলের দোকান চালান ।তার স্ত্রী সঞ্জিমা বিবি গৃহবধূ ।এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। সাবির ছোট ।তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে 443 নম্বর পাওয়ার খবর প্রকাশ হতেই অখ্যাত ভবানীপুর গ্রামের নাম এখন লোকের মুখে মুখে ঘুরছে ।সেই পরিবারে এখন প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজন ও রাজনৈতিক নেতাদের ভীড় ।দীর্ঘদিন আগে তৈরি দোতলা বাড়ির একটি ঘরে বসে পড়তেন ।পড়াশোনার ফাঁকে দোকানে বসে বাবাকেও সহযোগিতা করেন ।ছেলের মেধাশক্তি ও পড়ার প্রতি অতি আগ্রহ দেখে বাবা সেখ সলেমান তুলসীহাটা হাই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা আলামীন মিশনের সূর্য পুর শাখার চক পাঁচ ঘড়া সীতানাথ হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করেন।

সাবির বলেন, ‘ উচ্চ মাধ্যমিকে আমার কোন গৃহশিক্ষক ছিল না ।স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় রাত জেগে জেগে পড়াশোনা করে এই সাফল্য পেয়েছি ।এখন চিকিৎসক হয়ে সমাজসেবা করতে চাই।কিন্তু ডাক্তারি পড়তে গেলে প্রচুর খরচ ।তা কিভাবে জোগাড় করব তা ভাবতে পারছি না ।তাই উচ্চ শিক্ষা কি নিয়ে পড়ব তা এখনও ঠিক করতে পারিনি ।

স্ত্রী ও এক ছেলে ও এক মেয়ে ছাড়াও সেখ সলেমানের সংসারে আরও পাঁচ জন রয়েছে । তার বাবার আমলেই এই বাড়ি তৈরি ।সলেমানবাবু বলেন, দুই ছেলে মেয়ে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় ।এত দিন পর্যন্ত কোনও রকমে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছি।এখন ছেলের স্বল্প কীভাবে পূরন করব তা ভাবতে পারছি না ।এজন্য সরকারের কাছে অর্থ সহযোগিতা চেয়েছি ।সঞ্জিমা বিবি বলেন, আমি ও আমার স্বামী দু'জনের কেউই তেমন পড়াশোনা করিনি ।তাই সাবিরের পড়াশোনার উপর নজর দিতে পারিনি ।সাবির নিজের চেষ্টায় এবং শিক্ষকদের সহযোগিতায় এই সাফল্য পেয়েছে ।এতে আমরা গর্বিত ।সলেমানবাবু ও তার স্ত্রী মিতালী দেবী দু'জনেই বলেন, এখন রাজ্য সরকার পাশে দাড়ালে ভালো হয় ।তবে যে ভাবেই হোক ছেলের স্বপ্ন পূরণ করবই।সঞ্জিমা বিবি বলেন,ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করব ।

 

আলামীন মিশনে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই পড়তেন সাবির ।মাধ্যমিকে তিনি স্টার পাওয়ার পর বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন ।উচ্চ মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষায় 88. 6 শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। এবার তিনি 443 নম্বর পেয়েছে ।বাংলায় 80 , ইংরেজিতে 88, রসায়ন বিদ্যায় 66, অঙ্কে 91, পদার্থ বিদ্যায় 84 ,জীববিদ্যায় 86 পেয়েছেন ।

 

পড়াশোনার বাইরে তিনি ক্রিকেট খেলতে ও গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে ভালোবাসেন।তার প্রিয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনি ।তিনি বলেন, বন্ধুদের মতো আমার কাছে স্মার্ট ফোন নেই । তাই পড়াশোনার প্রয়োজনে মিশনে শিক্ষকদের ও বাড়িতে বাবার ফোন ব্যবহার করতাম ।মিশনের প্রধান শিক্ষক বলেন ওর পরিবারের অবস্থা জানি ।উচ্চ শিক্ষায় ওকে আমরা সবরকম সহযোগিতা করব ।