ভবিষ্যতে বিডিও হওয়ার স্বপ্নে অন্তরায় ফাকরুন
মোহঃ নাজিম আক্তার
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১০:২৫ পিএম, ২৮ মে ২০১৯ মঙ্গলবার
88.4 শতাংশ নম্বর পেয়েও ভবিষ্যতে বিডিও হওয়ার স্বপ্নে অন্তরায় অর্থসঙ্কট ফাকরুন নেশার।
হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভাবী মেধাবী ছাত্রী ফাকরুন নেশা এবছর কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিকে 88 শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ।হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা জুড়ে ওই ছাত্রীর অভাবনীয় সাফল্যে এলাকাজুড়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে । কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় । মনের জোর আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মানলো আর্থিক প্রতিবন্ধকতা ।কোন প্রতিবন্ধকতা যে শিক্ষার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তা একবার প্রমাণ করল ফাকরুন নেশা ।অভাব ও দারিদ্র তাদের নিত্য সঙ্গী ।খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান হয় ।কিন্তু মনের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা যে নেহাৎই তুচ্ছ তা প্রমাণ করে দিয়েছে তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাকরুন নেশা ।অভাবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে ।তার প্রাপ্ত নম্বর 442।বাংলায় 90 , ইংরেজিতে 85, শিক্ষাবিজ্ঞানে 78 , ভূগোলে 96, দর্শনে 93 ।স্কুলে প্রথম হয়েছে প্রিয়াঙ্কা বসাক।তার প্রাপ্ত নম্বর 462।মোট পরীক্ষার্থী ছিল 254 জন ।পাশ করেছে 177 জন ।80 শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে 14 জন।
ফাকরুন নেশা মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর - ১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা।তার ছোট থেকে ইচ্ছা বিডিও হওয়ার ।কিন্তু পারবে কি তার আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে ইচ্ছাকে পূরন করতে? মার্কশিটে জ্বল জ্বল করছে 88.4 শতাংশ নম্বর ।তবু ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তার মুখে হরিশ্চন্দ্রপুরের ফাকরুন নেশা ।ছোটো থেকেই তার পিছু ছাড়ে না অভাব ।তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের হালও ধরতে হয়েছে তাকে । এতসব বাধা সত্ত্বেও এমন অভাবনীয় ফলাফলে তাই ভীষণ খুশি ফাকরুন নেশার পরিবার ও প্রতিবেশীরা ।ফাকরুন নেশার রেজাল্ট প্রকাশিত হতেই এলাকা জুড়ে খুশির বাতাবরণ বইতে শুরু করে ।বাড়িতে মানুষের ঢল নামে । একের পর এক শুভেচ্ছা ফোন আসে ফাকরুন নেশার কাছে ।
ফাকরুন নেশা জানান, ' পড়াশোনাটা ভালো ভাবেই করতাম যাতে মেধা তালিকায় নাম আসে ।কিন্তু পরিক্ষা চলাকালীন আমার জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে ।তিনটা বিষয়ের পরিক্ষা শেষ হতেই আমার বাবা ফজলুর রহমান ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পরে ।যেদিন আমার দর্শন পরিক্ষা সেই দিন বাবাকে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ।বাবার শোচনীয় অবস্থা দেখে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ডাক্তার বাবুরা মালদা এক বেসরকারি নার্সিংহোমে রেফার করে দেন ।আমি পরিক্ষা দিতে রাজি না হলে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের প্রচেষ্টায় পরীক্ষা দিতে যায়।দুই দিন পর অর্থাৎ রবিবার বাবা মারা যান ।
ফাকরুন নেশা আরও জানান , ' বিধবা মা, দুই বোন ও এক ভাইকে নিয়ে মোট চারজনের অভাবের সংসার।বন ফরিদা ইয়াসমিন এবছর মাধ্যমিকে যথেষ্ট ভালো রেজাল্ট করেছে।ভাই মহ:জুনাইদ আলি মালদার এক বেসরকারি আবাসিক মিশনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে ।ভবানীপুর ব্রিজ মোড়ে বাবার এক ছোট্ট রাসায়নিক সারের দোকান ছিল ।সেটাই ছিল পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস ।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারে সবদিক থেকেই অভাব অনটন শুরু হয় ।এক এক করে ভেস্তে যেতে থাকে আমাদের বড়ো হয়ে ওঠার স্বপ্নগুলি।আমি পরিবারের বড় মেয়ে তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের হালও ধরতে হল।গ্রামবাসী ও আত্মীয় স্বজনদের আর্থিক সহযোগিতায় বাবার ছোট্ট রাসায়নিক সারের দোকানে একটি মুদির দোকান চালিয়ে কোনো ভাবে সংসার চালায়।দিনে 7 থেকে 8 ঘন্টা পড়তাম ।সবসময় পড়তাম ও প্রচুর পরিমাণে প্র্যাক্টিস করতাম ।এতো ভালো রেজাল্ট হওয়ায় খুবই আনন্দ লাগছে ।প্রত্যাশিত ফল হয়েছে।আমার এই ফলের পিছনে অবশ্যই আমার বাবা, মা , স্কুল শিক্ষক , গৃহশিক্ষকদের অবদান রয়েছে এমন কি আমার বন্ধুরা সহযোগিতা করেছে।
অন্যদিকে ফাকরুন নেশার মা জেইবেদি বিবি বলেন, কৃষক পরিবারের মেয়ের ফলে আমরা গর্বিত । হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মুখ উজ্জ্বল করে স্কুলে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে ।খুব ভালো লাগছে ।ছোটো থেকেই পড়াশোনাই মনোযোগী ছিল । মেয়ের উপর আমাদের ভরসা ছিল ।কোনওদিন চাপ দিইনি ওকে ।যতটা পেরেছি বন্ধুর মতোই মিশেছি ।সবসময় সববিষয়ে সাহস জুগিয়েছি।ওর ইচ্ছাকে বারবার গুরুত্ব দিয়েছি আর আগামী দিনে দিতে পারব কিনা তা নিয়ে চিন্তিত ।এতো ভালো রেজাল্ট হবে আশা করি করিনি ।তাই আজ বাড়িতে উৎসবের মেজাজ ।আর্থিক অবস্থা ভালো নয় ।চাষের জমি বিক্রি করে পড়াশোনা করাচ্ছি ।আমি চাই মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ।
ফাকরুন নেশার বিডিও হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেলেও সে ইংরেজি বা ভূগোল নিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে একজন আদর্শ শিক্ষিকা হতে চায় ।তাই সে এবং তার মা এখন সরকারি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছে ।