শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হরিশ্চন্দ্রপুর ইট ভাটা শ্রমিকের ছেলে তানবীরের মাধ্যমিকে চূড়ান্ত

পুষ্পপ্রভাত ডেক্স

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ১২:৩২ এএম, ২৪ মে ২০১৯ শুক্রবার

হরিশ্চন্দ্রপুর ইট ভাটা শ্রমিকের ছেলে তানবীরের মাধ্যমিকে চূড়ান্ত সাফল্য 
মো:নাজিম আক্তার 

দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে সাফল্যের চূড়ায় বসেও চিন্তায় ভাজ তানবীর আলমের।স্বপ্ন যেন এবার চোখের আড়ালেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে দারিদ্রের মধ্যেও নিজের লক্ষে স্থির থাকার প্রতিজ্ঞায়  সাফল্যের চাবিকাঠি হরিশ্চন্দ্রপুরের তানবীরের ।তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র । মোট 586 নম্বর পেয়ে স্কুলে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে । প্রথম হয়েছে  রূপতাজ খানম। তার প্রাপ্ত নম্বর  614

মোট 700 নম্বরের পরীক্ষায়  তানবীর পেয়েছে 586 নম্বর ।শতাংশের বিচারে 83.71 শতাংশ নম্বর পেয়ে পরিবার ও তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে।তানবীর বাংলায় 87,ইংরেজিতে 73, অংকে 86, ভৌতবিজ্ঞানে 82, জীবনবিজ্ঞানে 86,ইতিহাসে 87, ভূগোলে 91 পেয়েছে ।
ফল ঘোষণা হতেই তানবীরের বাড়িতে ভিড় আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের।মঙ্গলবার সকাল থেকেই পরিবারের সকলের চোখ ছিল মোবাইল নেটে ।প্রতিবেশীরা একে একে মিষ্টি মুখ করাতে শুরু করেন সকলেই তানবীরকে।গ্রামের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরাও উপস্থিত হন  তানবীরের বাড়িতে ।

হরিশ্চন্দ্রপুর - ১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা তানবীর দারিদ্র্যতা নিয়েই প্রতি বছরই স্কুলে প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থানেই নাম থাকত ।হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তানবীর আলম।বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল বড়ো  ছেলে একদিন  পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে ।টেস্ট পরীক্ষায় 544 নম্বর পেয়ে প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল ফাইনালে একটা ভালো ফলাফল করবে ।

বাবা জাহাঙ্গীর আলম পেশায় ইট ভাটার শ্রমিক, মা রেশমা খাতুন গৃহবধূ ।বাড়িতে এক বোন আর দুই মিলে মোট পাঁচ জনের অভাবের সংসার।যেখানে দু মুঠো ভাত জোগাড় করাই রীতিমতো কষ্টদায়ক, সেখানে পড়াশোনার জন্য অর্থ জোগানো এই পরিবারের জন্য যে প্রানান্তকর তাতে কোনো  সন্দেহ নেই ।তবুও তানবীর সব বাধাকে দূরে ঠেলে এই ফলাফল করতে পেরেছে তার মেধা, একাগ্রতা ও ভালো কিছু  করার অদম্য  জেদের কারণে ।এই ফলাফলে তানবীর খুশি অবশ্যই।কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক দূরাবস্থাও আগামী দিনে উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগানের অক্ষমতা  তাকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে । 

আগামী দিনে তানবীরের স্বপ্ন একজন  অঙ্কের ভালো শিক্ষক হতে চায় ।মাধ্যমিকে তানবীরের  মোট  তিন জন গৃহশিক্ষক থাকলেও সকলেই খুব সামান্য  পারিশ্রমিক নিয়েই পড়াতেন ।টিভি দেখার পাশাপাশি কবিতার বই পড়াসহ দিনে মোট ছয় ঘন্টা পড়াশোনা করত তানবীর ।সময় পেলে অঙ্ক  করতে ভালোবাসে তানবীর ।

ছেলের  সাফল্যে গর্বিত বাবা জাহাঙ্গীর আলম  ও মা  রেশমা খাতুন ।এখন তার বড়ো চিন্তা  আগামীদিনের ছেলের পড়াশোনা চালানোর খরচ কীভাবে বহন করবেন।তিনি বলেন, ছেলের পড়াশোনার জন্য সরকার যদি একটু সহযোগিতা করে, তবে তার ছেলের স্বপ্ন সফল হবে ।জীবনের  প্রথম বড় পরীক্ষায় ভালো সাফল্য পেলেও আর্থিক অনটনই আগামী  ভবিষ্যতের সাফল্য নির্ভর করছে  তানবীর আলমের।

তানবীর বলেন,' ছোট বেলা থেকেই বাবার কষ্ট চোখের সামনে দেখেছি, তাই আমি চাই  আমার মতো গরীব ছেলে-মেয়েদের জন্য 
 আমি বড়ো হয়ে ভালো করে একটু  পড়াশোনা করাব তাদের ।তবে বাবার আয় খুব সামান্য, তাই কতটা পড়াশোনা করতে পারব  তাই নিয়েও চিন্তায় আছি ।স্কুলের শিক্ষক থেকে  গৃহশিক্ষকদের সহযোগিতা খুব  ভালোভাবে পেয়েছি। বাবা-মা সব সময় আমাকে পড়ার ব্যাপারে গাইড  করতেন। তবে  ভাবতে পারিনি  এতটা ভালো ফল করতে পারব ।

তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃত ছাত্র তানবীর আলমের স্বপ্ন উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে পড়াশোনা করে কলেজ  ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করা ।তার জীবনের লক্ষ্য ভবিষ্যতে একজন আদর্শ শিক্ষক  হওয়ার ।কিন্তু  তার ইচ্ছাপূর্ন করার আর্থিক সামর্থ্য তার পরিবারের নেই ।তাই তানবীর মনে প্রাণে  চাইছে তার উচ্চশিক্ষা লাভে সরকারি বা বেসরকারি কোনো  সংস্থা, সহৃদয় ব্যক্তি কিংবা মিশনের  মতো  কোনো  আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত  বাড়িয়ে দিক ।নইলে অতিশয়  দরিদ্র পরিবারের ছেলে  তানবীরের ভবিষ্যত স্বপ্ন তার মাটির বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে পরে অপূনই থেকে যাবে,তা আর বাস্তবের মুখ দেখবে না ।