আর্থিক কেলেঙ্কারি, মালদা বণিকসভার ৪ শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে
হক নাসরিন বানু
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৯:২০ এএম, ১৯ মে ২০১৯ রোববার
মালদা
আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ চেম্বারে সম্পাদকসহ ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, তোলপাড় ব্যবসায়ী মহল। ১৩লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন মালদা বণিকসভা ৪ শীর্ষ নেতা। সপ্তাহখানেক ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে রয়েছে এই খবর। সোশ্যাল মিডিয়ায় জেলার সাধারণ ব্যবসায়ী বিন্দের পক্ষ থেকে। বণিক সভার সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডুর নামে খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জয়ন্ত কুন্ডু তার অনুগামী ,সভাপতি দেবব্রত বসু ,সহ-সভাপতি কমলেশ বিহানি ও যুগ্ন সম্পাদক উত্তম বসাক কে নিয়ে বণিকসভার নামে পাথর রপ্তানির টোকেন বিক্রি করেছে সাত মাস ধরে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। এই টাকা মার্চেন্ট ফান্ডে জমা না করে তারা সকলে মিলে আত্মসাৎ করেছেন।অবিলম্বে এই অর্থ চেম্বারের ফান্ডে জমা না দিলে যথাযথ ব্যবস্থার হুমকিও দিয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এই খোলা চিঠি এখন ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এই আর্থিক কেলেঙ্কারির খবরে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে জেলার ব্যবসায়ী মহল। উপযুক্ত তদন্তের দাবিও উঠতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে। প্রসঙ্গত, মহদীপুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্যের মূল সড়কে যানজট সমস্যা ছিল দীর্ঘদিনের। আর এই যানজটের মূল উৎস ছিল পাথরবোঝাই ট্রাক। আর সেই কারণেই নাকি যানজট।তৎকালীন মালদা ইংরেজবাজার থানার আইসি সীমান্ত বাণিজ্য বন্দরকে যানজটমুক্ত রাখতে পাথরের ট্রাক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।ইংরেজবাজার থানায় বসে রপ্তানিকারক ও মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের উপস্থিতিতে এক্সপোর্ট প্রমোশন সাব কমিটি তৈরি হয়।ঠিক হয় সুস্থানি মোড় থেকে কমিটির দেওয়া টোকেন পেলেই সেই পাথর রপ্তানি করা যাবে। অন্য কোন পাথরের গাড়ি রাস্তায় রাখা যাবে না। এই টোকেন পেতে পাথর রপ্তানিকারকদের খরচ করতে হবে মাত্র ৫০ টাকা। চালুও হয়ে যায় টোকেন পদ্ধতি। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই টোকেন রহস্য ফাঁস হতে শুরু করে। অভিযোগ উঠতে শুরু করে যে টোকেন প্রকৃত পাথর রপ্তানিকারকের বদলে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও বাহুবলি দের কুক্ষিগত হচ্ছে। আর এই টোকেন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৭/ ১৮ হাজার টাকা করে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয় পাথর রপ্তানিকারকদের মধ্যে। প্রায় সাত মাস এই পদ্ধতি চলার পর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। মালদা ইংরেজবাজার থানার নতুন আইসি আসার পরে এই টোকেন পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় জয়ন্ত কুন্ডু উদ্দেশ্যে খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, মালদামার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স এর নামে জয়ন্ত কুন্ডু সপ্তাহে বি গ্রুপে ৬ করে পাথর রপ্তানি টোকেন পেত। যা বাজারে তারা ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছে। মাসে ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা করে সাত মাসের ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা আয় করেছে। এই টাকা চেম্বারে ফান্ডে জমা করা হয়নি।তাহলে সমস্ত টাকায় ৪ জন মিলে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই খবর ভাইরাল হতেই ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ আছরে পড়তে শুরু করেছে চেম্বারে ৪ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। নেতাজি কমার্শিয়াল মার্কেটের সম্পাদক রতন সাহা জানান, চেম্বার সম্পাদকের কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই। তিনি শুধুই ভাষণ দিতে পারেন। এই ধরনের দুর্নীতি ইতিপূর্বে চেম্বার অফ কমার্সে হয়নি। টোকেন বিক্রি টাকা অবশ্যই চেম্বারে ফান্ডে জমা করতে হবে। নাহলে এই টাকা কোথায় গেলো? কে খেলো? এই চারজন খেলো? না চেম্বার কমিটি খেলো? এই ঘটনার তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। যদি তারা টাকা আত্মসাৎ করেন তাহলে তাদের মত দুর্নীতিবাজ আর কেহ নেই। মালদা হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন,১৯৫৫ সাল থেকে চেম্বার অফ কমার্স চলছে।এইরকম দুর্নীতি এর আগে কখনো হয়নি বা এরকম অভিযোগ কখনও উঠে আসেনি।আমরা সবাই মিলে যাকে আমাদের প্রতিনিধি তৈরি করেছি, সেই যদি দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয় তাহলে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যাবে। আমি এই ঘটনার তদন্তের দাবি তুলছি এবং দোষীদের শাস্তির দাবিও জানাচ্ছি। এই টাকাটা চেম্বারে নিজস্ব ফান্ডে জমা হওয়া উচিত। দুর্নীতি করার আগে তার ভাবা উচিত ছিল যে এই রকম দুর্নীতি করাটা ঠিক হবে কি হবেনা। ব্যবসা করার জন্য চেম্বার অফ কমার্স বসে নেই। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ছেড়ে উনি নিজের স্বার্থ দেখছেন যা ভারি অন্যায়।ঝরঝরিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুমন গোস্বামী ও সভাপতি সুকুমার সাহা ওরফে মনি বাবু জানান, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার আর্থিক দুর্নীতির খবর জানতে পেরেছি। যদি টাকাটা নিয়ে থাকেন অবিলম্বে চেম্বার ফান্ডে জমা দেওয়া উচিত। ঘটনার তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।যিনি চেম্বারে দায়িত্বে রয়েছেন তাকে পদত্যাগ করা উচিত। নেতাজি পৌরবাজার সমিতির সম্পাদক মানিক জাসওয়াল জানান, এই ঘটনার সাথে যদি কোন ব্যবসায় যুক্ত থাকে তবে মালদা জেলার প্রতিটি ব্যবসায়ীর মাথা নিচু হয়ে যাবে।ঘটনাটি সত্যি প্রমাণিত হলে নেতাজি পৌর বাজার সমিতির পক্ষ থেকে ওই ব্যবসায়ীর শাস্তির দাবি তুলব।পাথর রপ্তানির সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী শাহজাহান আলী অভিযোগ করে বলেন টোকেন পদ্ধতির ফলে একটি সিন্ডিকেট রাজ কায়েম হয়েছিল। প্রকৃত পাথর রপ্তানিকারকরা টোকেন থেকে বঞ্চিত হত।সেই টেকেন পাওয়া যেত রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও বাহুবলীদের কাছে।ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছিলেন প্রকৃত পাথর রপ্তানিকারকেরা।মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু কে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে হকচকিয়ে যান। পরে তিনি বলেন আজকেই অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। সেখানে কিছু অভিযোগ তোলা হয়েছে। যে টোকেন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, এই টোকেন পদ্ধতি পূর্বতম আইসি বদলি হয়ে যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়।টোকেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আজ পর্যন্ত আর কোন পাথর রপ্তানিকারককে টাকা দিয়ে মাল এক্সপোর্ট করতে হচ্ছে না। যদি ব্যবসায়ী সংগঠনের কোনো প্রতিনিধি বা কোন নেতৃস্থানীয় দুর্নীতি করে থাকে তাহলে মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। অন্যদিকে চেম্বারে সহ-সভাপতি কমলেশ বিহানি কে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঘটনার দায়ভার জয়ন্ত কুন্ডুর ঘাড়ে চাপিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। চেম্বার সম্পাদক যাই বলুন না কেন তার বক্তব্যে আরো একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ তিনি একধারে স্বীকার করে নিয়েছেন যে পূর্বতন আইসির আমলে টোকেন কেনাবেচা হত। এবং সেই টোকেন কেনাবেচায় মার্চেন্টের ভাগ ছিল কি ছিল না তা নিয়ে পরিষ্কার কোন বক্তব্য নেই তার। টোকেন দুর্নীতি হয়ে থাকলে তিনি কেন বিরোধিতা করেননি। এমনই একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে।